কলেজে নতুন ছাত্রী ভর্তি হওয়ার পরই ‘শিকার’ খুঁজত মনোজিৎ মিশ্র। প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে যেচে ‘বন্ধুত্ব’ করত। তারপর সুযোগ বুঝে তাঁদের স্পর্শ তথা হেনস্তা করতেও ছাড়ত না সে। অনেকে কলেজে ওই প্রভাবশালীর কার্যকলাপে বিরক্ত হলেও ভয়ে অভিযোগ করতেন না। কসবায় আইন কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের তদন্তে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে একের পর এক তথ্য ও অভিযোগ।
পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্লাস সেভেন থেকে মনোজিতের মদ আর গাঁজার প্রতি আসক্তি। স্কুল ছাড়ানোর পরই দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ‘মস্তানি’। আর কলেজে ভর্তি হওয়ার পর মাঝেমধ্যেই কোমরে বেআইনি অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ। সাহস এতটাই বেড়ে যায় যে, ফলস্বরূপ চেতলা ব্রিজের কাছে এক ব্যক্তিকে খুনের চেষ্টাও করে মনোজিৎ।
এছাড়াও একের পর এক মারপিট, ঝামেলা, এমনকী, অস্ত্র আইনের দু’টি মামলাও হয় মনোজিতের বিরুদ্ধে। মামলায় জড়িয়ে যাওয়ায় ওকালতি পড়তে গিয়েও চার বছরের জন্য পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার। এদিকে, প্রতিনিয়ত প্রচণ্ড নেশা করার পর মনোজিৎ ওরফে পাপাই ওরফে ম্যাঙ্গোর বিভিন্ন কীর্তিতে বিরক্ত কালীঘাট রোডের বাসিন্দা তারই প্রতিবেশীরা। তাঁদের অভিযোগ, নেশা করে পাড়ার একের পর এক যুবতী ও তরুণীকে হেনস্তা করত মনোজিৎ। আর তার সঙ্গে করত তোলাবাজিও।
আরও পড়ুন: দাঁড়িয়ে থাকতে হল অর্চনাদের, মহিলা কমিশনকে বাধা পুলিশের
মনোজিতের মা ও বাবা আলাদা থাকেন। বাবা কালীঘাট অঞ্চলের দাপুটে প্রাক্তন সিপিএম নেতা রবীন মিশ্রর কালীঘাটে পেঁড়ার দোকান রয়েছে। সেই দোকানটিও তিনি দখল করেন বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। শুক্রবার রবীন মিশ্র জানান, তাঁর ছেলে রাজনীতির শিকার। তবে সে দোষী হলে যেন শাস্তি পায়। মনোজিতের মা জানান, তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছেন ছেলের কীর্তি শুনে। তবে এখনই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, ছেলেকে মদত জোগাতেন বাবা। তাই ২০১৪ সালে আলিপুরের রাখালদাস আঢ্যি রোডে এক ব্যক্তিকে ছুরি দিয়ে খুনের চেষ্টা করে। ওই বছরই সে আইন কলেজে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু মামলার হাত থেকে বাঁচতে উধাও হয়ে যায়। চারবছর পর ফের ২০১৮ সালে ওই আইন কলেজে ভর্তি হয়। কালীঘাটে পালান নামে এক যুবক ও কসবায় এক ছাত্রকে অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখায়। গত বছর টালিগঞ্জেও একই ধরনের অভিযোগ হয়। এছাড়া যৌন হেনস্তারও একটি অভিযোগ হয় তার বিরুদ্ধে। আলিপুর আদালতেও এক মহিলা আইনজীবীকে মারধরের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছিল।
আরও পড়ুন: দলের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ কল্যাণের; বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেই
এদিকে, মনোজিতেরই সঙ্গী ধৃত জায়েব আহমেদের কাকা তিলজলার বাড়িতে জানান, কলেজে যে এতবড় একটা ঘটনা ঘটেছে ও সেখানে সে হাজিরও ছিল, বাড়ি ফিরেও ঘুণাক্ষরে তা কাউকে বুঝতে দেয়নি সে। বৃহস্পতিবার সকালে মনোজিৎ মিশ্রর বাড়ি যায় সে। তবে জায়েব নির্দোষ এমনটাও দাবি করছে না পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মতে, অপরাধ হতে দেখলে সেখানে চুপ থাকাটাও অপরাধের মধ্যে পড়ে। কিন্তু ঘটনার সময় জায়েবের কী ভূমিকা ছিল সেটা দেখা উচিত। এদিকে, অন্য অভিযুক্ত ছাত্র প্রমিত মুখোপাধ্যায়ের পরিবার এলাকায় সম্ভ্রান্ত বলে পরিচিত। তাঁদের ছেলে কীভাবে এই গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ল, তা নিয়ে ধন্ধে পরিবার। তাজ্জব এলাকাবাসীও।