দেবীপক্ষের তৃতীয়দিনে কলকাতার কপালে কেবল জল-যন্ত্রণাই। মঙ্গলবার রাতের বিরামহীন বৃষ্টিতে দিনভর যখন হাবুডুবু খেল শহর, তখন দিনের শেষেও ভোগান্তির উপসংহার সেই জল-যন্ত্রণাই। তবে এবার শঙ্কা আর সঙ্কটের কেন্দ্রে পানীয় জল। বাগমারি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের ভালভ ফেটে উত্তর কলকাতার একাধিক ওয়ার্ডে দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট।
আরও পড়ুনঃ মণ্ডপ ভাঙল হাতিবাগানে, জলে ডুবে বহু প্যান্ডেল; আতান্তরে উদ্যোক্তারা
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার আচমকাই বাগমারি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের ভালভ বিকট শব্দে ফেটে যায়। যেহেতু এই বুস্টার পাম্পিং স্টেশন উত্তর কলকাতার ৪টি ওয়ার্ডের পানীয় জল পরিসেবার কেন্দ্র, তাই বিপত্তির কারণে পানীয় জলশূন্য হতে পারে এলাকাগুলি। এর মধ্যে রয়েছে ১৩, ১৪, ১৫, ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ড। অর্থাৎ উল্টোডাঙ্গা, কাঁকুড়গাছি, বাগমারির মত ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বুধবার সকালে জল না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছে কলকাতা পুরসভা। জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি সহ অন্যান্য শীর্ষ পদস্থ কর্তারা রাতেই মেরামতির কাজে হাত দেন। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সেই কাজ হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তা সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে বুধবারের সকাল মানিকতলা, মুচিবাজার, কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগানসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
আরও পড়ুনঃ “বাজলো ছুটির ঘণ্টা”! মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি ‘পাঠশালা’-য় পুজোর ছুটির ঘণ্টা
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় কর্ম দিবসের শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি তিলোত্তমার। রাতভর বৃষ্টিতে কার্যত। জলে ভাসছে শহর কলকাতার একটি বড় অংশ। কোথাও হাঁটু সমান, তো কোথাও কোমর সমান জলে কার্যত হাবুডুবু অবস্থা কলকাতার। ভারী বৃষ্টির কারণে জমা জলে ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। হাওড়া এবং শিয়ালদহ উভয় ডিভিশন এই সকাল থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়ে ট্রেন পরিষেবা। স্বাভাবিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি মেট্রোতেও। অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা জলের তলায় চলে যাওয়ার কারণে বাস ছিল হাতে গোনা। ফলে অফিসে বেরিয়ে দিনশেষে ভোগান্তির অভিজ্ঞতা সম্বল করেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে মানুষকে। তবে শুধু ভোগান্তিই নয়, এদিনের জলবন্দি শহর কলকাতা কেড়েছে তরতাজা ১০ টি প্রাণ। বেলা যত বেড়েছে, ততই জায়গায় জায়গায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। জমা জল থেকে প্রাণহানির দায় কার, তা নিয়েও রাজনৈতিক দরকষাকষি নেহাত কম হয়নি। দিনজুড়ে ঘটনার ঘনঘটার মাঝে আরও এক সংযোজন বাগমারি বুস্টার পম্পিং স্টেশনের এই বিপত্তি। বুধবার কী রয়েছে কপালে? শহরের চার ওয়ার্ডের মানুষের মঙ্গলবারের রাতও যে নিশ্চিন্তের নয়, তা বলাই বাহুল্য।