উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন। সংসদের দুই কক্ষেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এই নির্বাচনে রাধাকৃষ্ণনের জয় প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু কৌতূহল ছিল ভোটের অঙ্ক নিয়ে। শাসক জোট শুধু নিজের ভোট অটুট রাখবে, নাকি অতিরিক্ত ভোটও জোগাড় করবে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল নানা মহলে। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ নিজেদের সব ভোট ধরে রাখতে পারবে কি না, সে দিকেও বিভিন্ন শিবিরের নজর ছিল। ফলাফল বলছে ‘ইন্ডিয়া’ প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডিকে ১৫২ ভোটে হারিয়ে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন এনডিএ প্রার্থী রাধাকৃষ্ণন।
রাধাকৃষ্ণন পেয়েছেন ৪৫২টি ভোট। সুদর্শন পেয়েছেন ৩০০টি ভোট।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার শুধু সাংসদদের। লোকসভার ৫৪৩ এবং রাজ্যসভার ২৪৫ আসন মিলিয়ে ভারতের সংসদে মোট আসনসংখ্যা ৭৮৮। কিন্তু রাজ্যসভায় ছ’টি এবং লোকসভায় একটি আসন এখন শূন্য রয়েছে। তাই মোট ৭৮১ জন সাংসদকে নিয়ে ‘নির্বাচকমণ্ডলী’ (ইলেক্টোরাল কলেজ) গঠন করা হয়। নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডি এবং কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল বিআরএস এই নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে আগেই ঘোষণা করেছিল। ফলে ৭৭০টির বেশি ভোট পড়া যে সম্ভব নয়, তা তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে কোনও প্রার্থী ৩৮৬টি ভোট পেলেই যে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিতে যাবেন, তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। পরে জানা যায় পঞ্জাবে বন্যার কারণে শিরোমণি অকালি দলের একমাত্র সাংসদ হরসিমরৎ কউর বাদলও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন না। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে যে সাত নির্দল সাংসদ রয়েছেন, তাঁরা কী করবেন, তাও স্পষ্ট ছিল না। ফলে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা আরও নীচে নামার সম্ভাবনাও ছিল। শেষ পর্যন্ত ভোট পড়ল ৭৬৭টি। অর্থাৎ জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৩৮৪। এনডিএ প্রার্থী রাধাকৃষ্ণন তার চেয়ে বেশ কিছুটা বেশি ভোট পেয়েই জিতলেন। যদিও ২০২২ সালে জগদীপ ধনখড় যে ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন, এ বার এনডিএ-র জয়ের ব্যবধান তার চেয়ে অনেকটাই কম।
আরও পড়ুনঃ হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব গোলযোগ! স্ক্রল করা যাচ্ছে না; বিপাকে লাখো লাখো মানুষ
লোকসভায় এনডিএ-র আসনসংখ্যা ২৯৩, আর রাজ্যসভায় ১৩২। অর্থাৎ দুয়ে মিলে ৪২৫। তাই এনডিএ প্রার্থী তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন রাজ্যপাল রাধাকৃষ্ণনের জয় নিয়ে কোনও মহলেই সংশয় ছিল না। তার উপরে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁর দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস সমর্থন করবে এনডিএ প্রার্থীকে। আম আদমি পার্টির বিক্ষুব্ধ সাংসদ স্বাতী মালিওয়ালও এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারেন বলে জল্পনা ছিল। ফলে এনডিএ-র হাতে খাতায়কলমে যে সংখ্যা রয়েছে, রাধাকৃষ্ণন তার চেয়ে বেশি ভোট পাবেন বলেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ মিরিক-পানিট্যাঙ্কিতে পাঠানো হল বিশাল ফোর্স, আগুন জ্বলছে ওপারে
মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১৪ মিনিটের মধ্যেই ‘বিরোধী ঐক্যের’ প্রশংসা করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি লেখেন, ‘‘বিরোধী শিবির ঐক্যবদ্ধ ছিল। বিরোধী দলগুলির ৩১৫ জন সাংসদের সকলেই ভোট দিতে এসেছিলেন। এই ১০০ শতাংশ ভোট পড়া নজিরবিহীন।’’ জয়রামের দেওয়া এই হিসাব অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’র হাতে থাকা সাংসদসংখ্যার সঙ্গে পুরোপুরি মেলেনি। লোকসভার ২৩৪ এবং রাজ্যসভার ৭৭ মিলিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র সকল শরিকদলের সম্মিলিত সাংসদসংখ্যা ৩১১। আর অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি এবং আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম যে হেতু ‘ইন্ডিয়া’ প্রার্থী সুদর্শনকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিল, তাই সেই সংখ্যা বেড়ে ৩২৪-এ পৌঁছোনোর কথা ছিল। জয়রাম ৩২৪ বা ৩১১, কোনওটিই লেখেননি। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন ৩১৫ সাংসদের উপস্থিতির কথা এবং তাকেই ‘১০০ শতাংশ বিরোধী ঐক্য’ বলে দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’ প্রার্থী সুদর্শন ৩০০টি বৈধ ভোট পেয়েছেন।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত ২১ জুলাই বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে হঠাৎই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়। তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য মঙ্গলবার ভোটাভুটি হল। জয়ী রাধাকৃষ্ণণ আগামী পাঁচ বছর ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।