কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
বিশ্বমানের স্টেশনে পরিণত হচ্ছে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। আমূল পরিবর্তন হচ্ছে গোটা এলাকার। কাজ শেষ হলে ওই এলাকার পুরো ভোল বদলে যাবে। কিন্তু বিশ্বমানের হওয়ার পথে পা বাড়ানো নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের নিরাপত্তা শিকেয়। গোটা স্টেশন চত্বর, টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে এসকালেটার এরিয়া, ফুট ওভারব্রিজ কোথাও পুলিশকর্মীর দেখা মিলবে না। স্টেশনের মূল প্রবেশদ্বারে দুটি লাগেজ স্ক্যানার রয়েছে। কিন্তু দুটিই অকেজো। প্ল্যাটফর্মে হাতেগোনা কয়েকজন জিআরপির কর্মীকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তবে সব প্ল্যাটফর্মে নয়, জিআরপি থানার আশপাশের দু’একটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যায় তাঁদের। নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশিকা এলে যে তৎপরতা থাকে জিআরপি বা আরপিএফের, অন্য সময়ে তার সিকিভাগও চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ।
বাস্তবে ছবিটা এমনই। এনজেপি স্টেশনে ঢুকলেই বোঝা যাবে নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। রেল পুলিশের সুপার (শিলিগুড়ি) কূঁয়রভূষণ সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য মেলেনি। শিলিগুড়ি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রাকেশ সিংয়ের বক্তব্য, ‘স্টেশন চত্বরে নিয়মিত পুলিশ ভ্যান টহল দেয়।’
আরও পড়ুন: স্বাবলম্বী সিদ্ধান্ত! সংস্কারে হাত দিয়েছে বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি
উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম বড় স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি। প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি আসে এই স্টেশন চত্বরে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা যাতায়াত করেন। বর্তমানে স্টেশনকে বিশ্বমানের করতে কাজ শুরু হয়েছে। তাই ঠিকাদার সংস্থার কয়েকশো শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন ওই এলাকায়। এই সুযোগে যে কেউ চাইলেই ঢুকে পড়ছে স্টেশন চত্বরে। অবাধে অটোস্ট্যান্ড দিয়ে ঢুকে যাওয়া যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মে। বহিরাগতরা দিনভর ঘুরে বেড়াচ্ছে অটোস্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন এলাকায়। প্ল্যাটফর্ম সহ করিডরগুলিতে অবাধে যাতায়াত ভবঘুরেদের। অভিযোগ, ভবঘুরের বেশে অনেক ছিনতাইকারীও ঘুরে বেড়ায় স্টেশনে।
স্টেশনের অটোস্ট্যান্ড সহ সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা দেখার কথা শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের। প্ল্যাটফর্মের ভেতরে নিরাপত্তা দেখার কথা জিআরপির এবং ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে আরপিএফ। তিনটে শাখার একত্রে কাজ করার কথা এনজেপিতে। কিন্তু আদতে স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তার বালাই নেই বলে অভিযোগ। স্টেশন চত্বরে পুলিশের টহলদারি নজরে পড়ে না। আগে পুলিশের টহলদারি ভ্যান ঘুরে বেড়াত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অটোচালকরা। অটোচালক মহম্মদ সাবিরের বক্তব্য, ‘আগে তো পুলিশের ভ্যান ঘুরতে দেখতাম। এখন আর তেমন ঝামেলা হয় না তো তাই পুলিশের ভ্যান আসে না।’
আরও পড়ুন: বিক্রি ৪৫ হাজার কেজি চা! এক দশক পর খুলল নিলাম কেন্দ্র
এর আগে একাধিকবার এনজেপি স্টেশন চত্বরে মারপিট, ঝামেলার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতার দখল নিয়ে সংঘর্ষে রেলযাত্রীদেরও হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছিল। এরপরেও কেন এনজেপির মতো স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্টেশনের অন্দরে এসকালেটার থেকে ফুট ওভারব্রিজ হয়ে প্ল্যাটফর্ম নামা পর্যন্ত কোনও পুলিশি নিরাপত্তা নেই। ওই সময় কোনও যাত্রী বিপদে পড়লে বা কোনও সমস্যা হলে দেখার কেউ নেই। দু’একটি প্ল্যাটফর্মে টহল দেওয়ার জন্যে একজন অফিসার এবং একজন করে সিভিক রাখা রয়েছে। তাঁরাও একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করেন বলে অভিযোগ। লাগেজ স্ক্যানার দুটিও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতে কারা স্টেশনে প্রবেশ করছে, ব্যাগে কী নিয়ে প্রবেশ করছে তা দেখার কেউ নেই।
কলকাতার বাসিন্দা শুভ্রাংশু দেব কর কর্মসূত্রে শিলিগুড়িতে এসেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি ট্রেন থেকে নেমে বাইরে আসা পর্যন্ত কোনও নিরাপত্তাকর্মী দেখিনি। এত বড় স্টেশনে এক-দুজন তো অন্তত নিরাপত্তরক্ষী থাকা দরকার।’