জগদ্ধাত্রী পুজোর নিরঞ্জন মানেই কৃষ্ণনগরের চেনা ছবি—আলো, শোভাযাত্রা, ঢাকের তালে আনন্দে ভেসে ওঠা শহর। শুক্রবারও সেই ঐতিহ্যের ব্যতিক্রম ঘটেনি। সকাল থেকেই শহরের নানা বারোয়ারি ক্লাব নিজেদের প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু আবহাওয়া বাধা হয়ে দাঁড়ায়। টানা বৃষ্টিতে দেরি হয় ঘট বিসর্জনের সময়সূচি, ফলে বিকেল গড়িয়ে রাত নামতেই জমে ওঠে নিরঞ্জনের ভিড়। এখান থেকেই শুরু অশান্তির সূত্রপাত—এক আনন্দঘন পরিবেশে হঠাৎ চাঞ্চল্যের ছোঁয়া।
আরও পড়ুনঃ বিজেপির খোঁচা, ‘TMC-র প্রাণভোমরা’, ভূতুড়ে ভোটারের হদিশ পানিহাটিতে
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, প্রতিটি ক্লাবকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরঞ্জন সম্পূর্ণ করতে হবে। কারণ, ওই রাস্তাতেই রয়েছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল, যেখানে প্রতি মুহূর্তে রোগী ও অ্যাম্বুলেন্সের যাতায়াত চলে। কিন্তু অভিযোগ, একাধিক বারোয়ারি ক্লাব সেই সময়সীমা উপেক্ষা করে রাত অবধি নিরঞ্জন চালিয়ে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে রাস্তায় জটলা বাড়তে থাকে, মাইক ও আলোর তীব্রতায় হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় অস্থিরতা তৈরি হয়। এরপরই পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরঞ্জনের সময় কিছু উদ্যোক্তা ও ক্লাব সদস্য পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি এক পর্যায়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ বারবার সতর্ক করলেও ভিড় ছত্রভঙ্গ হয়নি। তখনই উত্তেজনার মাঝে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় শুরু হয় হইচই, আতঙ্কে বহু মানুষ ছুটোছুটি করতে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ কমে গেল ৩ ডিগ্রি, মুচকি হেঁসে শীত জানান দিচ্ছে ‘আমি আসছি’
ঠিক এই সময়েরই একটি ভিডিয়ো শনিবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ভিডিয়োয় দেখা যায়, পুলিশের হাতে লাঠি, আর তাঁরা তেড়ে যাচ্ছেন নিরঞ্জনকারীদের দিকে। মুহূর্তে সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায়। শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, “উৎসবের দিনেও মানুষের উপর পুলিশি অত্যাচার!” ভিডিয়োটি ঘিরে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই পুলিশ বাধ্য হয়েছিল ব্যবস্থা নিতে।”
এই ঘটনার পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকটি বারোয়ারি ক্লাবকে চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, কেউ আইন হাতে নিলে তা বরদাস্ত করা হবে না। অন্যদিকে স্থানীয়দের একাংশের প্রশ্ন, “প্রশাসনের আরও আগে উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল, তাহলে হয়তো এমন লাঠিপেটা দেখতে হত না।” কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী নিরঞ্জনের সেই রাত্রি তাই এখন শহরের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। উৎসবের আনন্দ ছাপিয়ে এখন শহরজুড়ে একটাই প্রশ্ন—পুলিশের পদক্ষেপ কি ন্যায্য ছিল, নাকি অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ?





