Tuesday, 14 October, 2025
14 October
Homeউত্তরবঙ্গSiliguri: নীল-সাদা কুপন; চলছে ‘ভোজসভা’! ত্রাণ নয় মোচ্ছব, সরকারি অর্থ দেদারে অপচয় 

Siliguri: নীল-সাদা কুপন; চলছে ‘ভোজসভা’! ত্রাণ নয় মোচ্ছব, সরকারি অর্থ দেদারে অপচয় 

লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মোচ্ছবের আয়োজন করে বিতর্ক তৈরি করেছে তৃণমূল পরিচালিত মাটিগাড়ার আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

রাত তখন সাড়ে দশটা। তবুও পঞ্চায়েত অফিসের সামনে জটলা পাতলা হওয়ার নামগন্ধ নেই। ‘এই ব্যাচ উঠলেই বসে পড়তে হবে’- হাতে একটা নীল-সাদা কুপন নিয়ে দাঁড়িয়ে সকলে সেকথাই বলাবলি করছিল।

আরও পড়ুনঃ কি হবে এই বছর! প্রবল ও দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডা এইবার শীতে

ব্যাপারটা কী? একটু এগোতেই দামি বাইকে বসে থাকা এক তরুণের দিকে নজর গেল। মোবাইলে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সে বলছে, ‘আজি পঞ্চায়েত অফিসত খাসির মাংস দিয়া খানদান আছে। তাড়াতাড়ি চলি আয়’ (আজকে পঞ্চায়েত অফিসে খাসির মাংস দিয়ে খাওয়াদাওয়া আছে, তাড়াতাড়ি চলে আয়)। জিজ্ঞাসা করে বোঝা গেল, শুক্রবার থেকেই আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের নীচে চলছে ‘ভোজসভা’। প্রতিদিন কয়েকশো লোক সেখানে কবজি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া করছেন। বিপর্যয়ের পর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় হাহাকার চলছে। ভিনরাজ্য থেকেও এসেছে ত্রাণ। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও ক্ষতিগ্রস্তদের নানাভাবে সাহায্য করছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে নিজেদের কোষাগারের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মোচ্ছবের আয়োজন করে বিতর্ক তৈরি করেছে তৃণমূল পরিচালিত মাটিগাড়ার আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।

গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিচালনায় স্থানীয় খেলার মাঠে চলছে মেলা। সেই মেলা উপলক্ষ্যেই ভোজসভা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব মহম্মদ জইউদ্দিন ইসলাম। গত দু’দিন মেনুতে ডাল, ভাজা, সবজির সঙ্গে মাছ থাকলেও রবিবার ছিল খাসির মাংস। রান্নাও হয়েছে পঞ্চায়েত অফিসের নীচতলায়।

তৃণমূলেরই একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য যে হিসেব দিয়েছেন তাতে মোচ্ছবের জন্য বেশ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এই টাকা এল কোথা থেকে? পঞ্চায়েত সচিবের কথা, ‘পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছে। তবে টাকা কোন ফান্ডের তা সংবাদমাধ্যমে বলার দায়িত্ব আমার নয়। প্রধান ম্যাডামই ওই বিষয়ে যা বলার বলবেন।’

একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য জানিয়েছেন, ভোজসভার বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। পঞ্চায়েতের সাধারণ সভাতেও নাকি ওই বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি যে মিথ্যা নয় ঘুরিয়ে তা স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সন্টু দাস। তাঁর বক্তব্য, ‘কেন খাওয়াদাওয়া, কোথা থেকে টাকা আসছে, কোথায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আমি সেসব কিছুই জানি না। প্রধানই সব জানেন। তিনিই বলতে পারবেন। আমি পুরোপুরি অন্ধকারে।’ যদিও এদিন বহুবার ফোন করলেও ফোন ধরেননি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান যূথিকা রায় খাসনবিশ। গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ভোজসভার জন্য ‘ফুড কুপন’ ছাপিয়েছে। সেখানে তারিখ উল্লেখ করে পঞ্চায়েতের এক কর্তার স্বাক্ষর এবং পঞ্চায়েতের সিল দেওয়া আছে৷ অভিযোগ, প্রধান এবং তাঁর কিছু খাস পঞ্চায়েত সদস্যই নিজেদের পছন্দের লোকেদের কুপন বিলি করছেন।

আরও পড়ুনঃ ‘নাগালের বাইরে’? বিধাননগরের ১৪টি থানার সব মোবাইল নম্বরই ‘গলত হ্যায়’!

মেলায় দেদার জুয়া চলায় ইতিমধ্যেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। স্টল বিলি নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। এবার সরকারি টাকায় ভোজসভা নিয়েও উঠল প্রশ্ন। তৃণমূলের নেতাদের একটা অংশই পঞ্চায়েত প্রধানের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথা, ‘মুখ্যমন্ত্রী আছেন। তাই এসব নিয়ে এখন প্রকাশ্যে কিছু বলা যাবে না। তবে যা হচ্ছে তাতে আমাদেরই লজ্জা লাগছে। চায়ের দোকানে এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। দলের ইমেজ খুবই খারাপ হচ্ছে।’ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই গৌতম দেব, পাপিয়া ঘোষ সহ জেলার সব নেতার কাছেই অভিযোগ গিয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সফর থাকায় আপাতত বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বলা হয়েছে।

যদিও ভোজসভা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপির আঠারোখাই মণ্ডল সভাপতি সুভাষ ঘোষের কথা, ‘নির্লজ্জের মতো কাজ করছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত বোর্ড। সরকারি টাকায় প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক লোককে বিনা প্রয়োজনে খাওয়ানো হচ্ছে। ভোজসভায় আরও অনেক অনৈতিক কাজকর্মও হচ্ছে। ওই টাকায় দুর্গতদের ত্রাণ বিলি করলে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকত। আসলে গ্রাম পঞ্চায়েতের তহবিল নয়ছয় করার পরিকল্পনা করেই এইসব ভোজসভার আয়োজন করা হয়েছে।’ সিপিএমের মাটিগাড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক অসিত নন্দীর বক্তব্য, ‘উন্নয়নের কথা উঠলেই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ আর্থিক সংকটের কথা বলছেন। অথচ ভোজসভার নামে সরকারি টাকায় দলের ক্যাডারদের নিয়ে মোচ্ছব করতে তাঁদের বাধছে না। এসব করেই ওঁরা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন।’

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন