কিম জং উন। আধুনিক পৃথিবীর এমন এক স্বৈরশাসক, যাঁকে ঘিরে প্রতিনিয়তই পাক খায় রহস্যের কুয়াশা। আর ভেসে আসে গা শিরশির করা সব কীর্তিকাহিনির কথা। উত্তর কোরিয়া দেশটা যেন বেলজারের তলায় চাপা পড়া এক আশ্চর্য দেশ। যাকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। এই পরিস্থিতিতে সেদেশ থেকে ঘুরে এসে কিমের দেশের গল্প শোনালেন এক ভারতীয় ইনফ্লুয়েন্সার। তাঁর নাম ভুভানি ধরন। নিজের চোখে কিমেরে দেশের হালহকিকত কেমন দেখলেন কেরলের বাসিন্দা?
গত ৩ মার্চ ২২ জন পর্যটকের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ায় যান ধরন। আর আগে কোভিড আমল থেকে পাঁচ বছর বহির্বিশ্বের মুখের উপরে কার্যতই দরজা বন্ধ করে রেখেছিল পিয়ংইয়ং। আশ্চর্যের বিষয় হল তিনদিন সেখানে কাটিয়ে ওই পর্যটকের দল ফিরে আসার পরই ৬ মার্চ থেকে ফের পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের সদর দরজা।
আরও পড়ুন: রবিবারের পার হলেই ১০ জেলায় ভারী বৃষ্টি, পাক খাচ্ছে একসঙ্গে ৩ ঘূর্ণাবর্ত
ধরনের দলে সবশুদ্ধ দু’জন ভারতীয় ছিলেন। চারদিন, তিনরাত তাঁরা সেখানে ছিলেন। কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল? ধরনরা জানাচ্ছেন, উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করার পর থেকেই কড়া নজরদারির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। সরকার নিয়োজিত দু’জন গাইড, যাঁরা অনর্গল ইংরেজি বলেন, তাঁদের সারাক্ষণ ঘুরতে দেখা যায় দলটির পাশাপাশি। এমনকী, উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের পরও ফের সমস্ত পর্যটক ও তাঁদের ব্যাগপত্তর সব ফের নতুন করে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এবার পরীক্ষা করে সেনাকর্মীরা। ধরন জানাচ্ছেন, ”সকলকেই একটি তালিকা প্রস্তুত করতে হয়েছিল, যা তাঁদের সঙ্গে ছিল। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স। আসলে দেখা হচ্ছিল আমরা কোনও নিষিদ্ধ যন্ত্র যথা জিপিএস ডিভাইস কিংবা ধর্মীয় বই অথবা পর্নোগ্রাফি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি কিনা।”
সেদেশে প্রবেশ করার প্রথম যেখানে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটা পরিশ্রুত জলের কারখানা। কিন্তু সেখানে কাউকে সেভাবে কাজ করতেই দেখা যায়নি! যা দেখে ধরনের দাবি, ”আমার ধারণা সবটাই ছিল সাজানো। না হলে মাত্র দু’জনকে কাজ করতে দেখা গেল কেন?”
এখানেই শেষ নয়। যেখানেই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সবই ছিল কাছাকাছি। কিন্তু তবুও ঘুরপথে নিয়ে যাওয়া হয়। কেন এই অকারণ দীর্ঘ করে তোলার প্রবণতা? ধরনের মতে, পর্যটকদের মধ্যে বিভ্রান্তি আরও বাড়াতেই এই সিদ্ধান্ত কিম প্রশাসনের। কী কী দেখানো হয়েছিল? একটি জাদুঘর, ডিয়ার পার্ক, কয়েকটি স্কুল, কিছু কারখানা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে থাকা আদালতও! যা আপাত ভাবে সাধারণ, তাকেই যেন অতি গর্বের বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছিল বলেই অভিযোগ ওই ভারতীয় পর্যটকের।
যা যা দেখানো হয়েছিল প্রায় সবই ছিল সাজানো, এমনটাই ধারণা ধরনের। একটি স্কুলের মধ্যে বাচ্চাদের হইহই ও হাসাহাসি করতে করতে বাস্কেটবল খেলতে দেখা যায়। কিন্তু একটু পরে ফের সেখানে ফিরে এসে অবাক হয়ে ধরন দেখেন, কেউ কোত্থাও নেই। বাস্কেটবল কোর্ট খাঁ খাঁ করছে। অর্থাৎ বিষয়টা ছিল একেবারেই লোক দেখানো। এমন দৃশ্যের বর্ণনায় অনেকেরই ‘হীরক রাজার দেশে’ গুপী-বাঘার অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়বে।
আরও পড়ুন: এক সেকেন্ডে ধুলিসাৎ! তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল বহুতল
ধরন ও তাঁর সঙ্গীদের কিছু পরামর্শ, বলা ভালো নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যেমন, কোনও খারাপ কিছু দেখলে ছবি বা ভিডিও তোলা যাবে না। কোনও সেনার ছবি তোলা যাবে না। কোথাও একলা যাওয়া যাবে না। ‘উত্তর কোরিয়া’ এই শব্দটাই বলা যাবে না। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিম জং উনের নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করতে হবে। নামের আগে বসাতে হবে ‘ক্যাপ্টেন’ কিংবা ‘মার্শাল’।
ভ্রমণশেষে ধরনদের অভিজ্ঞতা হয়েছিল আরও ভয়াবহ। তাঁরা জানতে পেরেছিলেন, সেদেশে পর্যটকদের উপরে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ফলে সংশয় তৈরি হয়েছিল, আদৌ উত্তর কোরিয়া থেকে ওই পর্যটকের দলকে বেরতে দেওয়া হবে কিনা। শেষে অবশ্য যাবতীয় আলাপ-আলোচনার পর তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ২২ জন পর্যটক। ধরন বলছেন, ”ওরা বলে দিয়েছিল ফিরে গিয়ে কোনও রকম নেগেটিভ কিছু বলা যাবে না। সুতরাং আমার মতে আর সেখানে যাওয়ার কোনও সুযোগই নেই।”