আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কথা বললেই আমাদের মাথায় প্রথম আসে আমেরিকা ও ইউরোপের নাম। চারিদিকে চ্যাট জিপিটি গুগল জেমিনির ছড়াছড়ি। এবার সেই জুতোতেও পা গলাল চিন। চিনের নিজস্ব এআই চ্যাটবট ‘ডিপসিক’। বাজারে এসেই হইচই ফেলে দিয়েছে প্রযুক্তি জগত থেকে শেয়ার বাজারে।
প্রযুক্তির দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টির সঙ্গেই NIVIDIA-এর মতো বড় আমেরিকান কোম্পানির শেয়ারেও নামিয়েছে ধস। একদিনে NVIDIA-এর প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। প্রশ্ন হল কী এই ডিপসিক ?
আরও পড়ুন: Darjeeling Toy Train: প্রবল বৃষ্টি এবং ধসে ক্ষতিগ্রস্ত দার্জিলিং এর টয় ট্রেনের লাইন
ডিপসিকের নেপথ্য নায়ক –
লিয়াং ওয়েনফে বিশ্বব্যাপী এআই শিল্পে আলোড়ন সৃষ্টির জন্য দায়ী এই এই নামটি। ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও লিয়াং ওয়েনফেং-এর জন্ম চিনের ঝানজিয়াং-এর একটি সাধারণ পরিবারে। তার বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। লিয়াং এর জন্ম হয়েছিল বড় কিছু করার জন্য। প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণ স্কুলে হলেও লিয়াং এর যোগ্যতা তাঁকে বড় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভে সাহায্য করে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়েও গভীর জ্ঞান অর্জন করেন তিনি। সেটাই হয়ে ওঠে তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।
AI কেই নিজের জীবিকা হিসাবে বেছে নেন লিয়াং। ২০১৩ সালে হ্যাংজু ইয়াকেবি ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ২০১৫ সালে ঝেজিয়াং জিউহাং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট নামে দুটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এর পরে, ২০১৯ সালে হাই-ফ্লায়ার এআই প্রতিষ্ঠা করেন, যা ১০ বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি ব্যবসা করেছিল।
এর পরেই লিয়াং নিয়ে আসেন সেই যুগান্তকারী সৃষ্টি। ২০২৩ সালে নিয়ে আসেন ডিপসিক। AI এর সবচেয়ে জটিল প্রযুক্তি, অর্থাৎ AGI (কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা) কেন্দ্র করেই গড়ে তোলেন ডিপসিক।
আরও পড়ুন: Maldah Shoot Out: আবার গুলি মালদাতে, মদের আসরে চলল গুলি
কী ভাবে তৈরি হল ডিপসিক?
ডিপসিক তৈরির গল্প কোনও ছবির থেকে কম নয়। যখন আমেরিকান কোম্পানিগুলি তাদের AI মডেলগুলিকে NVIDIA-এর H100 Tensor Core GPU-তে প্রশিক্ষণ দেয়, তখন লিয়াং চিনে উপলব্ধ পুরোনো এবং সস্তা H800 GPU ব্যবহার করেই চালাতে থাকে ডিপসিকের খোঁজ। প্রায় 50,000 H800 GPU কিনে তার সাহায্যে ডিপসিককে প্রশিক্ষিণ দিয়েছে লিয়াং।
সস্তায় পুষ্টিকর বলতে যা বোঝায়, ডিপসিকও তাই, ডিপসিকের প্রশিক্ষণের মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ৫২ কোটি টাকা মতো। যা চ্যাটজিপিটি তৈরির খরচের চেয়ে ১০ গুণ কম। এত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও আজ ডিপসিক NVIDIA-এর মতো বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে লড়াই করছে চোখে চোখ রেখে।
ডিপসিক-এর প্রথম সংস্করণ, ডিপসিক-R1, ইতিমধ্যেই লঞ্চ হয়েছে। ইউসারদের মধ্যে জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে এই ডিপসিক। তাহলে কি ডিপসিক অদূর ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটির দিকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে? সেই উত্তর এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। AI এর জগতে প্রতিযোগিতা যে আরও কঠিন হতে চলেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।