শুভজিৎ মিত্র,কলকাতাঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের পর দাবি করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমাচ্ছে এবং আরও কমাবে। দীপাবলির শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরপরই ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদিও তাঁর মতোই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি চান। ট্রাম্পের এই বক্তব্যে দুই দেশের কূটনৈতিক মহলে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে জল্পনা শুরু হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে যখন পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে, তখন ভারতের জ্বালানি নীতির অবস্থান নিয়ে এই দাবি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আরও পড়ুনঃ আর কত মিথ্যা বলবে পাকিস্তান? অনলাইনে ‘জিহাদি শিক্ষা’ চালু করছে জইশ!
তবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই কথোপকথনের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, যা ট্রাম্পের দাবির ঠিক উল্টো সুর সৃষ্টি করেছে। মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ফোন করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং দীপাবলির শুভেচ্ছা বিনিময় ও বিশ্বজুড়ে আশা জাগানোর বার্তা দেন। একই সঙ্গে তিনি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশকে একজোট হয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। কিন্তু, মোদির এই বার্তায় ট্রাম্পের মূল দাবি—অর্থাৎ রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর বিষয়টি—সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই নীরবতা নয়াদিল্লির তরফে মস্কোর সঙ্গে তার জ্বালানি বাণিজ্যের বিষয়ে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সস্তায় তেল পাওয়ায় ভারত তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সরাসরি দাবি ভারতের কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি চাপ সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুনঃ লোকাল ট্রেন হয়ে গেল কলকাতা মেট্রো! কেউ ঘুমোচ্ছেন সিটে শুয়ে, কোথাও ঢুকছে কুকুর
যদিও এর আগেও ট্রাম্প এমন দাবি করেছিলেন, যা নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে সে সময় সরাসরি অস্বীকার করা হয়। ফলে, এবারও মোদির বার্তায় তেলের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ায় ট্রাম্পের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দুই শীর্ষ নেতার ভিন্নধর্মী পোস্ট থেকে এটা স্পষ্ট যে, ভারত ও আমেরিকার মধ্যেকার সম্পর্ক উষ্ণ হলেও কৌশলগত বিষয়ে এখনও মতপার্থক্য রয়ে গেছে। এক দিকে ট্রাম্প মস্কোর উপর চাপ বাড়াতে চেয়ে ভারতকে পাশে চাইছেন, অন্য দিকে নয়াদিল্লি তার দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। মোদির কূটনৈতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ বার্তা এবং ট্রাম্পের স্পষ্ট দাবি—এই দুইয়ের টানাপোড়েনে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক জ্বালানি কূটনীতি এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।





