শুভজিৎ মিত্র,নয়াদিল্লি:
দিল্লি যেন এখন আস্তো একটা গ্যাস চেম্বার। নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন উঠছে,হঠাৎ কি হল?দিল্লিতে।আসলে,বেশ কিছু বছর ধরে,শীতের শুরুতে বায়ুদূষণের যে চেনা ছবি দেখা যায়, তা এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। বাতাসে বিষাক্ত কণার পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত নিরাপদ সীমাকেও কয়েক গুণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের সংক্রমণ নয়, শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ থেকে শুরু করে হৃদরোগ পর্যন্ত একাধিক দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দূষণের ফলে শিশুদের ফুসফুসের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, যা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ফুঁসছে কাছেই…শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা
এই জীবনঘাতী পরিস্থিতি থেকে নিজেদের সন্তানকে রক্ষা করতে রাজধানী ছাড়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অনেক অভিভাবকই। সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত অনেক পরিবারই এখন নিজেদের কর্মস্থল বদল করে অন্য রাজ্যে বা তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন শহরে চলে যাচ্ছেন। এক অভিভাবক যেমন আক্ষেপের সুরে জানিয়েছেন, “দিল্লিতে ভালো চাকরি আছে, কিন্তু আমার সন্তানের স্বাস্থ্য নেই। যে শহরে নিঃশ্বাস নিলেই অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়, সেখানে কেন আমার সন্তান বড় হবে? ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব কিছু ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” এই প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে, যা রাজধানীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর উপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
দূষণের এই ভয়াবহতার মূলে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে ফসলের গোড়া পোড়ানো, গাড়ির ধোঁয়া, নির্মাণ কাজ এবং দীপাবলির পরে আতশবাজির নির্গমন—সব মিলিয়ে এক মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়। সম্প্রতি দিল্লির বাতাসের গুণমান সূচক (AQI) ‘গুরুতর’ বা ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পিএম ২.৫-এর মাত্রা হু-এর নিরাপদ সীমার প্রায় ১০০ গুণ বেশি। এই ক্ষুদ্র কণাগুলি সরাসরি ফুসফুস এবং রক্তে প্রবেশ করে মারাত্মক ক্ষতি করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো বা গাড়ির জোড়-বিজোড় নীতি চালুর মতো নানা পদক্ষেপ নিলেও, দূষণমুক্ত বাতাসের জন্য দিল্লিবাসীর অপেক্ষা যেন আর শেষ হয় না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেবলমাত্র উৎসব বা সাময়িক পদক্ষেপ নয়, বরং দূষণের স্থায়ী উৎসগুলিতে লাগাম টানা না গেলে এই ‘পলায়ন’ কখনোই থামবে না। দূষণ এখন আর পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি সরাসরি জীবন-ধারণের সমস্যা।
আরও পড়ুনঃ থানার চত্বরেই ‘চিকনি-চামেলি’! ‘কেষ্ট-পর্ব’ মিটতেই বিতর্কে বোলপুর থানার আইসি
দিল্লির বাতাস এখন এক অলিখিত জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যেখানে নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকারই প্রশ্নের মুখে। রাজধানীতে নিজেদের স্বপ্ন এবং জীবন গড়ে তোলা বাবা-মায়েরা এখন সন্তানের জন্য এক সুস্থ নিশ্বাসের খোঁজে নিরুপায় হয়ে অন্য ঠিকানা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আদৌ কি ফের রাজধানী দিল্লিতে স্বচ্ছ ও মুক্ত পরিবেশ ফিরে আসবে?,যেখানে শিশুদের জন্য প্রাণ নিশ্বাস নেবার জাগায় থাকবে।





