শীত পুরোপুরি পড়েনি। বাতাস ভারী হয়ে রয়েছে। রাত্রির নিস্তব্ধতায় কারও পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে কি ওই? কে যেন এগিয়ে আসছে চুপি চুপি? কে সে? কোন অতীন্দ্রিয় রহস্যে জেগে উঠছে গোটা পৃথিবী? না, কোনও গল্প কথা নয়। এ দেশে ভূত চতুর্দশীতে যেমন আমরা এই অনুভূতি লালন করি আমাদের সংস্কৃতিতে, ঠিক তেমনই পাশ্চাত্যে আসে হ্যালোউইন। এই দুটি ভৌতিক উৎসব প্রায় হাত ধরাধরি করে আসে পরপর। তবে মজার কথা হল, ক্রিসমাসের মতো হ্যালোউইনকেও ভারতীয়রা আপন করে নিয়েছে। কিন্তু কী এই হ্যালোউইন?
আরও পড়ুনঃ বলিউডে সদ্য মুক্তি পাওয়া “থামা” ছবিতে মন জুড়ানো গান গেয়ে জনপ্রিয় বালুরঘাটের সৌম্যদীপ
আজ ৩১শে অক্টোবর সন্ধ্যায় পালিত হচ্ছে জনপ্রিয় উৎসব হ্যালোউইন। এটি মূলত পশ্চিমা দেশগুলিতে শুরু হয়েছিল। উৎসবে মৃত আত্মাদের স্মরণ করা হত। হ্যালোউইন প্রায় ২,০০০ বছরের পুরোনো একটি রীতি। এটি প্রাচীন কেল্টিক উৎসব সামহেইন থেকে এসেছে। প্রাচীন কেল্টিকরা মনে করত ৩১শে অক্টোবর হল গ্রীষ্মের শেষ। এই দিনটি ছিল তাদের নববর্ষের আগের রাত। তারা বিশ্বাস করত, এই রাতে জীবিত ও মৃতদের সমস্ত জাগতিক সীমারেখা ভেঙে যায়। ফলে মৃত আত্মারা পৃথিবীতে নেমে আসে।
কেল্টরা তখন আগুন জ্বালিয়ে উৎসব করত। আত্মাদের সন্তুষ্ট করতে পশু বলি দিত। এলাহি ভোজের আয়োজন হত। তারা নিজেদের আড়াল করতে নানা রকম পোশাক পরত। এর ফলে মৃত আত্মারা তাদের চিনতে পারত না।
আরও পড়ুনঃ ভাবা যায়, শনিবার রাতে চন্দননগরের রাস্তায় নামবে চন্দ্রযান!
পরবর্তীকালে রোমান এবং খ্রিস্টধর্মের প্রভাবে এই উৎসবে পরিবর্তন আসে। অষ্টম শতাব্দীতে ক্যাথলিক চার্চ এই প্রথাকে ‘অল সেন্টস ডে’ বা ‘অল হ্যালোজ ইভ’-এর সঙ্গে যুক্ত করে। এই ‘অল হ্যালোজ ইভ’ থেকেই ‘হ্যালোউইন’-এর জন্ম।
১৯শ শতকে আইরিশ অভিবাসীদের হাত ধরে এটি আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে হ্যালোউইন একটি মজার সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মানুষজন ভূত, জাদুকর বা মজার সব চরিত্র সেজে ঘুরে বেড়ায়। শিশুরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ক্যান্ডি বা মিষ্টি সংগ্রহ করে। এমনকী কুমড়ো খোদাই করে লণ্ঠন তৈরি করতেও দেখা যায়। এই দিন বিভিন্ন থিম পার্টির আয়োজনও চোখে পড়ে। যদিও বলিউডের দাক্ষিণ্যে ভারতে হ্যালোউইন জনপ্রিয় হয়েছে। বলিপাড়ার তারকামহলে ভূতের পোশাক পরে হুল্লোড় করতে দেখা যায় অনেককেই। সাজগোজ- খাওয়াদাওয়া, পার্টি সবই চলতে থাকে। তেমনি হ্যালোউইন পার্টিতে কলকাতাও পিছিয়ে নেই। কেউ রাক্ষস সেজে, কেউ বা ভূত সেজে রাতের বেলায় আবাসনে ঘুরে বেড়ায়। বড়দের চাইতে কচিকাঁচারা বেশি আনন্দ করে এই হ্যালোউইন পার্টিতে। বাঙালির রবারোমাসের তেরো পাব্বনে ‘হ্যালোউইন’ এখন এক মজার উৎসব!





