সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকে ৫৮টি নথিভুক্ত পুজো কমিটি এই সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় একশোটির বেশি পুজো কমিটি রয়েছে, যারা এই অনুদান পায় না। ফলে এইসব পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে আক্ষেপ রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, সরকারের কাছ থেকে অনুদান পেলে সুবিধা হত।
এই প্রসঙ্গে বিডিও অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ব্লকের ঘোকসাডাঙ্গা থানা ও নিশিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির মোট ৫৮টি নথিভুক্ত পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে অনুদান দেওয়া হয়। এই সংখ্যা বাড়ানোর সরকারি নির্দেশ এলে তা বাড়ানো হবে। পুজোর প্রশাসনিক নিয়মনীতি মেনে সকলকে পুজোর আয়োজন করতে হবে।’ ইতিমধ্যে মাথাভাঙ্গা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাবলু বর্মন জানিয়েছেন, ব্লকের আরও কিছু পুজো কমিটিকে যাতে অনুদান দেওয়া হয়, সেজন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন রেখেছি। অনুদান দেওয়া হলে আরও অনেক পুজো কমিটি উপকৃত হবে।
আরও পড়ুনঃ বন্ধ থাকবে মেট্রো! কোন লাইনে, কবে, কখন?
অনুদান না পাওয়া পুজো উদ্যোক্তাদের মতে, কয়েকবছর ধরে চাঁদার পরিমাণ কমেছে। অন্যদিকে, জিনিসপত্রের দাম অনেকটাই বেড়েছে। তাই আয়োজনেও খরচের বাজেট বেড়েছে। কাগজপত্রে খামতি থাকায় তাঁরা পুজোর অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারেননি। নিজেরাই চাঁদা তুলে অর্থসংগ্রহ করে পুজো করছেন। এবছরও চাঁদার ওপরই ভরসা করে তাঁদের থাকতে হচ্ছে। একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, এবছর সুযোগ থাকলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে সরকারের অনুদানের জন্য ফের আবেদন করতাম। অনুদান পেলে তাঁরা অনেকটাই উপকৃত হবেন।
এবারে দুর্গাপুজো বাবদ আর্থিক অনুদান ৮৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় খুশি অনুদানপ্রাপ্ত পুজো উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, সরকারি অনুদান পাওয়ায় বাজেট কিছুটা বেড়েছে। পুজোয় নতুনত্ব আনাও সম্ভব হয়েছে। অনুদান না পেলে হয়তো পুজোর খরচ কুলিয়ে ওঠা কঠিন হত বলে অভিমত পুজো উদ্যোক্তাদের। তবে গ্রামের অনেক পুজো উদ্যোক্তার মতে, এখন আর আগের মতো চাঁদা পাওয়া যায় না। অনুদান পেলে গ্রামের ছোট ক্লাবগুলির পুজো করতে সুবিধা হবে।
আরও পড়ুনঃ শুরু মাইকিং, ‘হাই অ্যালার্ট’ মালদহে! ট্রানজিট রুট বাংলা! উত্তরের পথেই ঢুকে পড়েছে জঙ্গি?
এদিকে, পুজো কমিটিগুলিকে সরকারি অনুদানের বিষয়টি নিয়ে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। তাঁদের মতে, পুজো উপলক্ষ্যে ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিলেও ছাড় মিলছে। অথচ সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত থাকছেন মৃৎশিল্পীরা। স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছেন, বাজার থেকে ঋণ নিয়ে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরি করেন। অথচ তাঁরা পরিশ্রমের দাম পান না। স্থানীয় মৃৎশিল্পী গৌতম পালের কথায়, ‘আমাদের জন্য সরকারের কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। প্রতিমা তৈরির সরঞ্জামের দাম অগ্নিমূল্য হওয়া সত্ত্বেও আমরা প্রতিমার ভালো দাম পাচ্ছি না। এরপরও কিছু তৈরি প্রতিমা অবিক্রীত অবস্থায় থেকে যায়। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আমাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।’



