সালটা ২০২৪। মনে আছে সন্দেশখালির (Sandeshkhali) কথা? বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে কীভাবে একজোট হয়ে পথে নামেন মহিলারা? নারী নির্যাতন থেকে জমি দখল, গুচ্ছ-গুচ্ছ অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে ছিল। এবার সেই একই ঘটনার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে! সন্দেশখালির শাহজাহানের মতো সন্ত্রাস,অত্যাচার,জুলুমবাজি চালানোর অভিযোগ শেখ ফিরোজ নামে এক তৃণমূল নেতার বিরূদ্ধে। জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিজেকে রাজ্যের প্রভাবশালী নেতা,বিধায়ক,সাংসদ ও মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করা শেখ ফিরোজের দাপট নাকি ‘তালিবানি’ শাসনকেও হার মানিয়েছে। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
তৃণমূল কংংগ্রেস নেতা শেখ ফিরোজের বাড়ি জামালপুরের বেড়ুগ্রাম অঞ্চলের চক্ষণজাদি গ্রামে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, শেখ ফিরোজ বড় কোনও পদে থাকা তৃণমূল নেতা নয়। তবে তাঁর স্ত্রী হাসনারা বেগম ২০১৮ সাল থেকে একটানা বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদে রয়েছেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্ত্রী পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর থেকেই ফিরোজ নিজেকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের কার্যত বেতাজ বাদশা। অভিযোগ, তিনিও শাহজাহানের মতো নিজের বাহিনী নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করেন। তাঁর ভয়ে রীতিমতো তটোস্থ হয়ে থাকেন এলাকাবাসী। আর তাই এবার ফিরোজকেও জেলেবন্দি করার দাবিতে এককাট্টা হয়েছেন বেরুগ্রাম অঞ্চলের চক্ষণজাদী, চককৃষ্ণপুর,শম্ভুপুর,জামুদহ সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। তার জন্য তাঁরা জেলার পুলিশ সুপারের কাছেও সেই আর্জি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ রাজাবাজারে রক্তারক্তি কাণ্ড! আচমকা চপার নিয়ে আইনজীবীকে আক্রমণ ৩ যুবকের
পুলিশ সুপারকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাস,অত্যাচার ও লুটপাট চালিয়ে ফিরোজ অর্থ, ধন-দৌলত ও সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, বর্গাদারের জমি কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে চক্ষণজাদী গ্রামের মসজিদ ও স্কুলের সম্পত্তি পর্যন্ত ফিরোজ জবর দখল করে নিয়েছে। মসজিদ তহবিলের অর্থ হাতিয়ে নিতে ও মসজিদের জমিতে জিম সেন্টার গড়ে তুলতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি সে। স্থানীয় বাসিন্দা ওসমান মল্লিক বলেন, “মসজিদের জমি সেটাও দখল করে জিম বানিয়ে নিয়েছে। এমনকী মসজিদের একতলা বিল্ডিংও দখল করে। এরপরই আমরা পুলিশে অভিযোগ জানাই।”
তাঁরা এও জানাচ্ছেন, ক্যানসার আক্রান্ত শাহ আলম মল্লিক ও তাঁর ভাইদেরকেও ফিরোজ রেহাই দেয়নি অভিযুক্ত। তাঁদেরও জমিজমাও ফিরোজ জোর জবরদস্তি দখল করে নিয়েছে। এমনকী, কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামেও টোপ দিয়ে এই তৃণমূল নেতা অনেকের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়েছেন।
তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজের বিরুদ্ধে কি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? তা জানতে জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাসকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
যদিও শেখ ফিরোজ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। ফিরোজ বলেন, “বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন ওরফে দানি ২০১৩ সালের আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাঁচ ভাঙা,লোহা ভাঙা কিনতেন। তখন কোনও রকমে ওদের দিন চলত। ২০১৩ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ওই দানি নানা অনৈতিক উপায়ে অর্থ রোজগার করা শুরু করে। দামোদরে অবৈধ খাদান খুলে বালি চুরি করাতেও দানি হাত পাকিয়ে ফেলে। লুটের সাম্রাজ্য চালিয়েই দানি এখন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়ে গিয়েছে।”
ফিরোজ এও বলেন, “দানির নানা অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ আমি করেছিলাম। তার বদলা নিতে দানি পরিকল্পনা করে এলাকার লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে। কারোর জমি,বাড়ি ,সম্পত্তি কেড়ে নেননি বলে শেখ ফিরোজ দাবি করেছেন।”
বেরুগ্রাম আঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন আবশ্য ফিরোজের এইসব বক্তব্যকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “চোরের মায়ের বড় গলা।ওর সব অন্যায় ও অপকর্মের কথা আমি দলের জেলা ও ব্লক সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছি।”
জামালপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁনকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি গ্রামবাসীদের পুলিশের কাছে গিয়ে ফিরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বলে ছিলাম। গ্রামের বাসিন্দাদের সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা পুলিশই বলতে পারবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বেরূগ্রামের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। ঘটনা সত্যি হলে দল ব্যবস্থা নেবে।”
বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “তৃণমূলের রাজত্বে গোটা বাংলাই এখন সন্দেশখালি। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলকে সন্দেশখালি বানানোর নেপথ্য কারিগর শুধু একা ফিরোজ নয়। বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি দানি সহ ব্লক তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা নেতারাও সমান দোষী।”