‘সিপিএম এবং আরএসএসের বিরুদ্ধে আদর্শের দিক থেকে লড়াই করি,’ লোকসভায় বললেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তুঙ্গে বিতর্ক, চাপানউতর ইন্ডিয়া জোটোর অন্দরে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ বাম নেতা-কর্মীরাও। ফের প্রশ্নের মুখে জোটের ভবিষ্যৎ।
কেরলে এক অনুষ্ঠানে রাহুল আরএসএস ও সিপিআইএম-কে একাসনে বসিয়ে যেভাবে ‘মানবিকতার অভাব’-এর অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে শুরু হয় সমস্যা। সূত্রের খবর, শনিবার জোটের অনলাইন বৈঠকেও এই বিষয়টি তুলে ধরেন সিপিআই নেতা ডি রাজা।
আরও পড়ুনঃ অঙ্ক কষে ধরিয়ে দিলেন E²-র ফর্মুলা! অভিষেকের আড়াই চাল
কেরলের কোট্টায়মে একটি স্মরণসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে রাহুল বলেন, ‘আমি আরএসএস এবং সিপিএম উভয়ের বিরুদ্ধেই আদর্শগত লড়াই করি। কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় অভিযোগ, এদের কারও মানুষের প্রতি কোনও অনুভূতি নেই।’ তাঁর বক্তব্য, ‘রাজনীতিতে থাকলে আপনাকে মানুষের কথা শুনতে হবে, তাঁদের ছুঁতে হবে, যন্ত্রণা বুঝতে হবে। আজকের ভারতীয় রাজনীতির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হল, খুব কম লোকই অন্যদের অনুভূতি বোঝে।’
এই মন্তব্যের পর বাম নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এই ধরনের মন্তব্য জোটের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। ইন্ডিয়া জোটের ওই বৈঠকে ডি রাজা রাহুলের নাম না করে বলেন, এমন মন্তব্য এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটা একদিকে যেমন কর্মীদের মনে মনোবল নষ্ট করে, তেমনই জোটের ঐক্যেও সমস্যা তৈরি করে।
এক বাম নেতা বলেন, ‘আমরা তো শুরু থেকেই বলে আসছি, ‘দেশ বাঁচাও, বিজেপি হটাও’। তাহলে এখন কী করে জোটসঙ্গীদের মধ্যে তুলনা টানা যায়? এর ফলে জোটের মধ্যেই বিভাজনের বাতাবরণ তৈরি হবে।’
CPI(M)-এর পলিটব্যুরো সদস্য এমএ বেবি রাহুলের ওই মন্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে ব্যাখ্যা করেন। এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘সিপিএম এবং আরএসএস-কে একসঙ্গে তোলা রাহুলের রাজনৈতিক অজ্ঞতার পরিচয় দেয়। তাঁর মনে রাখা উচিত, ২০০৪ সালে কংগ্রেস সরকার গঠনের পিছনে বামেরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না কংগ্রেসের।’
এমএ বেবির কথায়, ‘রাহুল গান্ধী যাঁর বিরুদ্ধে লড়েছেন, তিনি ছিলেন সিপিআই-এর প্রার্থী। ওখানে তো বিজেপি বা আরএসএস-এর কোনও শক্তিশালী উপস্থিতি ছিল না। আমরা কংগ্রেসের সমালোচনা করি ঠিকই, কিন্তু কখনওই কংগ্রেসকে বিজেপি বা আরএসএস-এর সঙ্গে একাসনে বসাই না। রাহুল গান্ধী কি জানেন, কেরলে কংগ্রেস কীভাবে আরএসএস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, নাকি সেই ইতিহাসও তাঁর অজানা?’
উল্লেখ্য, রাহুল গ্নাধী কেরলের ওয়াইনাজ কেন্দ্রে সিপিআই প্রার্থী অ্যানি রাজার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। পরে তিনি রায়বরেলি থেকে জিতে সেই আসন ছেড়ে দিলে প্রিয়াঙ্কা গ্নাধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও জয়ী হন।
এই পরিস্থিতিতে জোটে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট। বাম নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে, তারা স্বাধীনভাবে কংগ্রেসের নীতির সমালোচনা করলেও, কখনেওই আরএসএস বা বিজেপির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবে না। স্বভাবতই তাই এসব সহ্য করার প্রশ্ন ওঠে না।
এনিয়ে কংগ্রেসের তরফে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


                                    
