দুর্যোগের হাত থেকে এখনই রেহাই নেই। বরং শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কথা জানাল আলিপুর আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত একাধিক দফায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর মাঝে একটি দফায় প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে ঘণ্টায় ২-৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য পুলিশের হেল্পলাইন, চালু হল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর
কেন? ২৫ জুলাই বিকেল সাড়ে পাঁচটার আপডেট অনুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গত ৬ ঘণ্টায় প্রায় ২২ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যায় এটি অবস্থান করছিল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর, ২২.৭° উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭.৪° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। মেদিনীপুর শহরের প্রায় ৩০ কিমি উত্তর-উত্তরপূর্বে, বাঁকুড়া থেকে ৮০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে, পুরুলিয়া থেকে ১২০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে এবং ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর শহর থেকে প্রায় ১৩০ কিমি পূর্বে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই গভীর নিম্নচাপ আরও পশ্চিম–উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এর প্রভাবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশার উত্তরাঞ্চল, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগড়ের উত্তরাংশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, কিছু জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া দফতর। নদী বাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ‘অপরাজিতা বিল’ ফেরত; সংবিধানের বিধির পরিপন্থী
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত ৮টা ৩০ পর্যন্ত শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১৬.৫ মিলিমিটার। শুক্রবার সকাল ৮টা ৩০ থেকে রাত ৮টা ৩০ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩৫.৬ মিলিমিটার।
শুক্রবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ২.৫ ডিগ্রি কম। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি কম। বাতাসে সর্বোচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ, এবং সর্বনিম্ন ৭৬ শতাংশ।
গত ৯ ঘণ্টায় আলিপুরে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সল্টলেকে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৩২ মিলিমিটার। গত ৯ ঘণ্টায় বিধাননগরে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৭ মিলিমিটার। তার মধ্য়ে শেষ ৯ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ৫০ মিলিমিটার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০.৫ মিলিমিটার। তবে গত কয়েক ঘণ্টায় বৃষ্টি কমেছে সেখানে। মেদিনীপুরে গত ৯ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ৮৫ মিলিমিটার। দিঘায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
নদিয়ার কৃষ্ণনগরে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ২৪.৭ মিলিমিটার। তবে আপাতত বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাঁকুড়ায় ৫ এবং বীরভূমে ৫৬.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়ছে।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ক্যানিংয়ে ৩৬, কাঁথিতে ১১, হলদিয়ায় ২৫, বর্ধমানা ৩২, পানাগড়ে ২৪.২, আসানসোলে ৭.৮, পুরুলিয়ায় ৬, ব্যারাকপুরে ৪২, সিউড়িতে ৪.৪, ঝাড়গ্রামে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সাগরদ্বীপে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির কোথাও কোথাও অল্প বৃষ্টি হয়েছে। যেমন, গত ২৪ ঘণ্টায় মালদহে ১০৯, দার্জিলিঙে ০.৮, কোচবিহারে ৩.২, জলপাইগুড়িতে ৮.২ এবং বালুরঘাটে ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার টানা বৃষ্টিতে কলকাতার নিচু এলাকাগুলির কোথাও কোথাও জল জমেছে। ব্যাহত হয়েছে ট্র্যাফিক পরিষেবা। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ফিয়ার্স লেন, এমজি রোডের একাংশ থেকে কলেজ স্ট্রিট বাটা মোড়ে জল জমে রয়েছে। ওই রাস্তাগুলোয় যান চলাচলের গতি ছিল মন্থর। মা উড়ালপুলেও কিছুটা ধীর গতিতে যান চলাচল করছে। শুক্রবার দুপুরে হাডকো মোড়ে রাস্তার উপর একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। সেই কারণেও ওখানে কিছু ক্ষণের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হয়।