সূর্য্যকান্ত চৌধুরী, বাঁকুড়াঃ
ফি বছর বাঁকুড়ার হীরবাঁধের প্রত্যন্ত গ্রাম দোমহানিতে দেখা যায় মেয়ের হাতে মায়ের পুজো। আদিবাসী রমণী সরস্বতী হাঁসদা ২৩ বছর ধরে নিষ্ঠাভরে দুর্গা পুজো করেন। প্রথম দিকে এই পুজো করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল, অশান্তিও কম হয়নি। কিন্তু সে সব পার করে সরস্বতীর মাতৃবন্দনা এখন বেশ জনপ্রিয়। নিয়ম মেনে কোনও পুরোহিত হাঁসদা বাড়ির এই দুর্গাপুজো করেন না। সরস্বতী নিজেই পুজো করেন, নিজেই মন্ত্র পড়েন। বাইরে থেকে লোক আসেন তাঁর পুজো দেখতে
এ পুজোয় চাকচিক্য নেই, আলোর জৌলুসও থাকে না। কিন্তু সরস্বতীর কাছে এ পুজো প্রাণের পুজো। সাঁওতালি ভাষায় মন্ত্রোচারণ করে নিয়ম ও নিষ্ঠাভরে প্রতি বছর মায়ের আবাহন করেন জঙ্গলমহলের এই বধূ।
আরও পড়ুনঃ শহরে থমাস! ফরাসি শিল্পীই সাজাবেন উত্তর কলকাতার হাতিবাগানের এই পুজোর মণ্ডপ
সরস্বতী জানান, কলকাতা থেকে লোক আসেন এই পুজো দেখতে। ওডিশা, টাটা, রাঁচি থেকেও লোকজন আসেন। এ ছাড়াও সারা বছর লোকজন আসেন। কারণ, এক বছর ধরে প্রতিমা থাকে এখানে। প্রতি বছর দশমীতে আগের বছরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
সরস্বতী জানান, দু’দশক আগে যখন এই পুজো শুরু হয়, সেই শুরুর দিনগুলো খুব সুখের ছিল না তাঁর পরিবারের কাছে। দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরুর চেষ্টা করলে শ্বশুরবাড়ি রাজাডালি থেকে এক প্রকার বিতাড়িত হয়েই দোমহানি গ্রামে ননদের বাড়িতে আশ্রয় নেন সরস্বতী। আদিবাসী সমাজে যে হেতু মূর্তি পুজোর নিয়ম নেই, তা নিয়েও সমস্যা হয়। থানা, পুলিশ হয়।
আরও পড়ুনঃ পরিবর্তিনী একাদশীতে সারাদিন সৌভাগ্য যোগ, বড় সাফল্য পাবেন এই চার রাশি
তবে এখন আর তেমন সমস্যা হয় না। মনসা, কার্তিক, শিব, সরস্বতী, করম, বাহা পুজো— সবই করেন চার সন্তানের জননী সরস্বতী। হাঁসদা বাড়ির দুর্গাপুজো এখন সর্বজনীন। এই পুজোকে ঘিরে এলাকার মানুষ আনন্দোৎসবে মেতে ওঠেন বলেও তিনি জানান।


                                    
