ভোটে নজর রেখে যখন ঘর গোছাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি, তখন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আচমকা জল্পনা ছড়াল। দিলীপ ঘোষ নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে পারেন বলে গুঞ্জন তৈরি হল পদ্ম শিবিরে। সে গুঞ্জন ছড়াল দলের বাইরেও। কত জনকে নিয়ে বৈঠক করেছেন দিলীপ, কোথায় বৈঠক করেছেন, কবে করেছেন, এমন নানা কথা ভাসতে শুরু করেছে। তবে ‘দিলীপের বৈঠকে’ যাঁরা ছিলেন বলে জল্পনা, তাঁদের অধিকাংশই ‘বৈঠকে’ থাকার কথা বা ‘বৈঠক’ হওয়ার কথা অস্বীকার করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ নেতা জানিয়েছেন, বৈঠক হয়েছে বলে তিনিও খবর পেয়েছেন। তবে তিনি নিজে সেখানে ছিলেন না বলে তাঁর দাবি।
ঠিক কী কী জল্পনা তথা গুঞ্জন ছড়িয়েছে দিলীপকে ঘিরে?
গুঞ্জন-১: শুক্রবার সল্টলেকে জনা পঁচিশ বিজেপি নেতানেত্রী দিলীপের নেতৃত্বে বৈঠকে বসেছিলেন।
গুঞ্জন-২: সে বৈঠকে নতুন হিন্দুত্ববাদী দল গঠনের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
গুঞ্জন-৩: দলের সম্ভাব্য নাম ‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু সেনা’ (পিএইচএস)।
গুঞ্জন-৪: সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার একটি অংশে এই দলের নাম লেখা টি-শার্ট বিলি হয়েছে।
গুঞ্জন-৫: এই দলের নাম নথিভুক্ত করতে খুব তাড়াতাড়িই নির্বাচনে কমিশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা পড়তে চলেছে।
দিলীপ যদি সত্যিই এমন কোনও বৈঠক করে থাকেন, তা হলে কারা তাঁর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন? এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর কারও কাছেই নেই। যাঁরা এই ‘বৈঠক’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা করছেন, তাঁদের কাছেও এ সব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর নেই। কিন্তু জল্পনায় নানা গোত্রের নেতা ও নেত্রীর নাম। বিজেপিতে এই মুহূর্তে ‘বিক্ষুব্ধ’ হিসেবে পরিচিত কারা? কাদের সঙ্গে বর্তমান নেতৃত্বের দূরত্ব বেশি। বড় সরকারি পদ ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে কাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি? এমন অনেক নেতা ও নেত্রীর নাম নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: কোমর বাঁধছে ইরান! ‘খাইবার শেকান’ মোতায়েন করছে তেহরান
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ওই ‘বৈঠকে’ ছিলেন বলে অনেকের দাবি। কিন্তু আনন্দবাজার ডট কমকে সায়ন্তন বলেন, ‘‘আমি শুক্রবার সকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের কর্মসূচিতে ছিলাম। সব কর্মসূচি প্রকাশ্য ছিল। কখন কোথায় গিয়েছি, সেই এলাকার বিজেপি কর্মীদের জিজ্ঞাসা করলেই নিশ্চিত হয়ে যাবেন।’’ সায়ন্তনের কথায়, ‘‘প্রথম অনুষ্ঠান ছিল দক্ষিণদাঁড়িতে। পরে আমতা-উদয়নারায়ণপুর চলে গিয়েছিলাম। রাতে নিউটাউনে আর একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাঁতরাগাছিতে এমন জ্যামে আটকেছিলাম যে নিউটাউনের ওই অনুষ্ঠানেও যেতে পারিনি। শুক্রবার যদি কোনও বৈঠক হয়েও থাকে, আমি সেখানে ছিলাম না।’’
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি রাজকমল পাঠকের নামও ওই ‘বৈঠকে’র উপস্থিতি তালিকায় ছিল বলে একাংশের দাবি। কিন্তু রাজকমল বলছেন, ‘‘এমন কোনও বৈঠকে আমি ছিলাম না। আমাকে কেউ বৈঠকে ডাকেননি। আর ডাকলেও আমি যেতাম না। ১৯৯০-এর দশক থেকে বিজেপিতে রয়েছি। দল ভোটের টিকিটও দেয় না। তাও তো বিজেপিতেই রয়েছি। তাই আমার অন্তত অন্য দলে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।’’ রাজকমলের ব্যাখ্যা, ‘‘এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনের অবসানের জন্য মানুষ বিজেপির মুখ চেয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি ভেঙে নতুন দল কেউ গড়লে, তা মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে বলে আমি মনে করি।’’
আরও পড়ুন: সংঘাতে জড়িয়েছে আমেরিকা; বেড়ে যাবে তেলের দাম রাত পোহালেই
রাজ্য বিজেপির আর এক প্রাক্তন সহ-সভাপতি রীতেশ তিওয়ারি এই মুহূর্তে দল থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ‘বরখাস্ত’ হয়ে রয়েছেন। তিনি ‘বৈঠকে’ ছিলেন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়। রীতেশের গলাতেও প্রায় রাজকমলেরই সুর। তিনি আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘আমি এমন কোনও বৈঠকের কথা এই প্রথম শুনছি। তবে যদি এমন বৈঠকের কথা জানতে পারতাম, বা যদি আমাকে কেউ ডাকতেন, তা হলেও যেতাম না।’’ রীতেশের সংযোজন, ‘‘বিজেপি আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে বলে কেউ বিজেপি ভাঙলে তাঁর সঙ্গে গিয়ে যোগ দিতে হবে, এমন মনে করি না। আমি যেমন আছি, ভালই আছি।’’
এই নেতাদের মধ্যেই একজনের অবশ্য দাবি, এ রকম একটি বৈঠক হয়েছে বলে তিনি খবর পেয়েছেন।
এত জল্পনার মাঝে দিলীপ নিজে কী বলছেন? তিনি আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছেন, ‘‘এ রকম কিছুই এখনও পর্যন্ত হয়নি। কোমরে ব্যথায় কয়েক দিন কষ্ট পাচ্ছিলাম। ঘর থেকে বেরোতেই পারছিলাম না। অনেক দিন পরে গতকাল (শনিবার) যোগ দিবস পালন করতে বেরিয়েছিলাম। আর আমার নামে এ সব বলে যাচ্ছে।’’ সল্টলেকে শুক্রবার ২৫ জনকে নিয়ে ‘বৈঠক’, দলের নাম স্থির করে নেওয়া, সেই নাম লেখা টি-শার্ট বিলি হওয়া, এ সব জল্পনাই তা হলে পুরোপুরি ভিত্তিহীন? দিলীপ বললেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত এ রকম কোনও খবরই নেই। আমি চুপচাপ বসে বসে সব দেখছি। আমার নামে কত কিছু চলছে।’’