এক সময় সন্ধ্যা নামলেই বেজে উঠত বেতার থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, আর মনের গভীরে ছুঁয়ে যেত সেই সুরের আবেশ। বাড়ির মেঝেতে বসে মা-বাবার সঙ্গে গান শোনার অভ্যেস আজ অনেকের স্মৃতিতে মিশে গেছে। কিন্তু এখন সে জায়গা দখল করেছে স্মার্টফোনের স্ক্রল, রিল ভিডিও আর ডিজিটাল শোরগোল। এই বদলে যাওয়া সময় যেন একটা বড় ফারাক তৈরি করেছে প্রজন্মের মধ্যে সঙ্গীত মানে শুধু সুর আর তাল নয়, তা এক অনুভব—যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তবে আজকের প্রজন্মের কাছে সঙ্গীত অনেকটাই ‘ভিউস’, ‘লাইকস’ আর ‘শেয়ার’ কেন্দ্রীক হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যাওয়া গানই এখন ‘সফলতা’র মানদণ্ড। এর ফলে অনেক গুণী শিল্পীও আজ পিছিয়ে পড়ছেন শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ না থাকার কারণে।
বাংলা সঙ্গীত জগতের অন্যতম পরিচিত মুখ শ্রাবণী সেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, গভীরতা এবং প্রকাশভঙ্গি বারবার মুগ্ধ করেছে শ্রোতাদের। কিন্তু এবার এই শিল্পী প্রকাশ করলেন এক কঠিন বাস্তব। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “আজকাল শুধু গান গেয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়।” তাঁর মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার্স কম থাকলে শিল্পীদের প্রতি শ্রোতাদের আকর্ষণও কমে যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক হলেও বাস্তব।
শ্রাবণী সেন আরও বলেন, তাঁর একটি গানে হয়তো ৩০০টি লাইক ওঠে, কিন্তু অন্য কোনও তেমন না-জানা গায়িকার গানে উঠে যায় লাখো লাইক। তখনই বুঝতে হয়, এই যুগ কতটা বদলে গেছে। তাঁর ভাষায়, “যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ নয়, তারা প্রতিবাদ করলেও পিছিয়ে পড়ছে।” এমনও বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম গান বেছে নিচ্ছে ডিজিটাল পপুলারিটির ভিত্তিতে, গুণমান নয়।
আরও পড়ুন: ভুল অন্তর্বাস পরেই বাড়ছে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব, বলছে গবেষণা!
শ্রাবণী সেন অকপটে জানিয়েছেন তাঁর মনের দুঃখ-দোলাচলের কথা। সঙ্গীত জগতের যে বদল আজ তিনি দেখছেন, তা মেনে নিতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে। এত বছর ধরে পরিশ্রম, গুণমান, তালিম—সব কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার এলগোরিদম আর ভিউসের খেলা। তবু তিনি বিশ্বাস করেন, “ভালো গান কখনও মরে না, হয়তো সময় লাগে, কিন্তু শ্রোতা একদিন ফিরবেই সুরের কাছে।” তাঁর এই বিশ্বাসই দেখিয়ে দেয়, শিল্পীর শক্তি কোথায়।