অফিসে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা দাঁড়িয়ে একটা চাকরীর দরখাস্ত নিয়ে যখন ইন্টারভিউ হলে হাজির হয় তখন একবার নরেন ঘরের কথা ভেবে নেয়। ঘরে অসুস্থ মা চঞ্চলাদেবী আর অন্ধ বোন সুনিতা, এই তাদের সংসার। সাংসারিক দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়েও আজ নরেন যেটুকু পড়াশুনা শিখেছে তা তার মা আর বোনের দৌলতে। অভাবের মধ্য দিয়ে তাদের দুজনের বোঝা আজ নরেন মাথায় তুলে নিতে চায়।
“বসুন”, নরেন ইন্টারভিউ রুমে ঢুকতেই চেয়ারে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলেন।
নরেন সামনে রাখা চেয়ার টেনে বসে যায়। সামনে বসে থাকা তিন অজানা ব্যক্তি একবার নরেনের মুখের দিকে তাকিয়ে তারপর নিজেদের মধ্যে তাকাতাকি করেন। ক্ষণিকের জন্য সমস্ত রুমটা নিস্তব্ধ, নিঃশব্দ হয়ে যায়। টাই – কোট পরিধান করে চোখে চশমা এঁটে তিনজন ব্যক্তি যেন এই জগতের হর্তাকর্তা বিধাতা।
“আপনার নাম কি?” এবার প্রশ্নের ঝড় উঠতে থাকে। তিনজন ব্যক্তির মধ্য থেকে একজন ব্যক্তি বলেন।
“আজ্ঞে নরেন ঘোষাল। ”
“বাড়ী?”
“নিকুঞ্জপুর”।
“আপনার ডিগ্রী অর্থাৎ আপনি কতদূর পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন?” অন্য একজন ব্যক্তি প্রশ্ন করেন।
“গত পাঁচ বছর আগে আমি গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি।”
“আপনার কাগজপত্র দেখে তা বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা, আপনি গ্র্যাজুয়েশনের সাথে আর কিছু করেছিলেন?”
“না, সে সৌভাগ্য আমার হইনি।”
“গুড।” এবার তৃতীয় ব্যক্তি বলতে শুরু করেন।
“আচ্ছা নরেনবাবু, আপনি যখন বাইরে ছিলেন তখন এমন কি দেখেছেন যে ভিতরে আসার পর একই জিনিস দেখলেন অর্থাৎ দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।”
এবার প্রশ্নটা নরেনের মাথায় ঘুরঘুরি পোকার মত ঘুরতে থাকে। অনেক চেষ্টা করার পর যখন সে পারল না তখন সে চুপ করে যায়।
প্রথম ব্যক্তি এবার হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে নরেনকে বললেন, “তাহলে আপনি এবার আসুন। ” এই বলে কলিং বেলটা বাজালেন। নরেন চেয়ার ছেড়ে উঠে যায়।