বৃহস্পতিবার রাত থেকে গোলাগুলি শুরু হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে। পাকিস্তানি সেনাদের তরফ থেকে কয়েকটি ভারতীয় পোস্টে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ার জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা। এরই মধ্যে পহেলগামে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মূল অভিযুক্ত লস্কর-ই-তইবার জঙ্গি আসিফ শেখের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল নিরাপত্তা বাহিনী।
পহেলগাম হামলায় যে জঙ্গিদের পরিচয় ও ছবি সামনে এসেছে, আসিফ শেখ তাদের অন্যতম।
বৃহস্পতিবার রাতের দিকে নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন একাধিক এলাকায় হঠাৎই গুলি চালায় পাকিস্তান। ভারতীয় সেনা সঙ্গে সঙ্গে এই হামলার জবাবও দেয়, যদিও কোনও পক্ষেই হতাহতের খবর নেই।
আরও পড়ুন: অবশেষে পাকিস্তানের ভিতর থেকেই এল বড় খবর! জেনারেল মুনিরই বেছে বেছে হিন্দুদের মারতে বলেছিলেন?
এই সীমান্ত সংঘর্ষের কয়েকদিন আগেই পহেলগাঁওয়ে একটি জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন। তদন্তে উঠে এসেছে লস্কর-ই-তবার যোগসূত্র। লস্করের শাখা সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট (TRF) হামলার দায়ও নিয়েছে। এই ঘটনার পরই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এর মধ্যেই পহেলগাম হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে সন্দেহভাজন লস্কর জঙ্গি আসিফ শেখের কাশ্মীরের বাড়ি নিরাপত্তা বাহিনী গুঁড়িয়ে দেয়। জঙ্গি ও তাদের আশ্রয়দাতাদের যে কোনওভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র, তারই যেন পদক্ষেপ করা শুরু করল সেনা।
পহেলগাম হামলার পরে বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট সিকিউরিটি কমিটির বৈঠক হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘প্রত্যেক জঙ্গিকে ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বার করে চিহ্নিত করা হবে, এবং উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: বিশ্বের সামনে ‘বেআব্রু’ পাকিস্তান! রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকে পহেলগাঁও পরিস্থিতি ব্যাখ্যা ভারতের
এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে গোলাগুলির পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির লড়াইও শুরু হয়েছে বান্দিপোরার কুলনার বাজিপোরা এলাকায়। ওই অঞ্চলে জঙ্গিদের উপস্থিতির খবর পেয়ে এলাকা ঘিরে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল নিরাপত্তা বাহিনী। তার পরই শুরু হয়েছে গুলির লড়াই।
ইতিমধ্যেই বৃহস্পতিবারের সর্বদলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার কার্যত স্বীকার করেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় গাফিলতি ঘটেছিল। প্রশাসনের অজান্তে স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের জন্য রুট খুলে দেওয়াতেই পহেলগামে হামলার সুযোগ তৈরি হয়।
সরকারের তরফে জানানো হয়, প্রতি বছর জুন মাসে অমরনাথ যাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রুট পর্যটকদের জন্য খোলা হয়। কিন্তু এবার স্থানীয় পর্যটন সংস্থাগুলি প্রশাসনকে না জানিয়ে আগেই, অর্থাৎ ২০ এপ্রিল থেকেই, পর্যটক বুকিং নিতে শুরু করে। এতে প্রশাসন নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের সুযোগ পায়নি।
এই পরিস্থিতিতে পহেলগাম নিয়ে সীমান্ত উত্তেজনার পাশাপাশি ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, ৬০ বছরেরও পুরনো সিন্ধু জলচুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানও এইসব সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পাল্টা হুমকি দিয়েছে যে, তারা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে থাকা সমস্ত চুক্তি, এমনকি ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিও স্থগিত করতে পারে। এই সিমলা চুক্তিই বর্তমানে কাশ্মীর ও লাদাখ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণরেখার বৈধ ভিত্তি।