কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
কেকের আবার রসমালাই! ভাবতে অবাক লাগলেও ভারতীয় খাবারের দুনিয়ায় এখন যে বিপ্লব শুরু হয়েছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিউই ফুল দিয়েই তো কেক তৈরি হচ্ছে। অনেকে ফাঁকিবাজি মেরে সিন্থেটিক রং, সুগন্ধী ঢেলে কিউই কেক তৈরি করছেন। আবার অনেকে অথেন্টিক হওয়ার নেশায় বুঁদ।
অন্তত তিন ঘণ্টা আগে অর্ডার করলেই মিলবে এমন কেক। যেমন শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাসিন্দা মধুমিতা ভাওয়াল ও তাঁর মেয়ে নিকিতা। অনলাইনে কেকের ব্যবসা করেন তাঁরা। সুইগির ডেলিভারি বয় ভিড় করেন তাঁদের বাড়িতে।
আরও পড়ুন: খড়দহে শোরগোল! তৃণমূল কর্মীর বাড়ি থেকে উদ্ধার প্রচুর অস্ত্র
ডিমবিহীন ওই কেক এতটাই খাঁটি যে এসির বাইরে তিন ঘণ্টার বেশি রাখা সম্ভব নয়। সমস্ত উপাদান গলে যেতে শুরু করবে। তাঁদের তৈরি ফ্রুট কেক মন্দিরে পুজোর নৈবেদ্য হিসাবে নিয়ে যান ক্রেতারা। কেক কিনলেই তো হবে না। সেটাকে প্রেজেন্ট করার ভাবনাও থাকে অনেকের মধ্যে।
ক্রেতার ওই ভাবনাকে সাকার করতে মধুমিতা গুয়াহাটি থেকে বিহার দৌড়ে বেড়ান। ফলে চমকপ্রদ সব কেক তৈরি হয় মা–মেয়ের হাত ধরে। রেড ভেলভেট কেক উইথ চিজ়, রসমালাই কেক, ফ্রুট কেক, কিউই কেক, চকো কেক, সুগারলেস কেক, কুকিজ়, ব্রাউনি এবং তার সঙ্গে কাস্টমাইজ়ড ডিজাইন।
ছোট আকারের কেক কিনলে পাঁচশো, সাতশো টাকার মধ্যে হয়ে যায়। তবে পার্টি কেক কিনলে একটু বেশি টাকা লাগে। মধুমিতার কথায়, ‘কেক বানাতে গিয়ে কেবল ব্যবসার কথা ভাবলেই হবে না। ভালো কেক তৈরি করার মধ্যে একটা সাধনারও ব্যাপার থাকে। আমি সেই কাজটাই করি। যিনি আমার কাছ থেকে কিনবেন, তিনি সারাজীবনই আমার কাছেই অর্ডার করবেন, এই ভাবনা কাজ করে আমার মধ্যে।’ সাধনাই বটে।
আরও পড়ুন: বাংলায় বাড়ল সংক্রমণ, বাংলায় প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যু
কেননা, মধুমিতার এমন কেক তৈরির ব্যবসার কোনও প্রয়োজনই ছিল না। স্বামী নব্যেন্দু পেশায় ওষুধের হোলসেল ব্যবসায়ী। শিলিগুড়ি শহরের ক্ষুদিরামপল্লিতে পাইকারি ওষুধের ব্যবসা। হাকিমপাড়ায় নিজেদের পারিবারিক তিন তলা বাড়ি। ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ম্যানেজমেন্ট পড়ছেন।
মেয়ে নিকিতা কলকাতার বাসন্তী দেবী কলেজে অঙ্কে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এর বাইরে মেয়ে নাচ শেখেন। দূরদর্শনের বি-গ্রেড আর্টিস্ট। তার পরেও মধুমিতার মনে হয়েছিল, জীবনে একটা অপূর্ণ সাধ রয়ে গিয়েছে। সেটা হচ্ছে, স্বামীর ব্যবসার বাইরে গিয়ে নিজে স্বাধীন ভাবে কিছু একটা করা।
২০১৯ সালে ছেলে শুভঙ্করকে দিল্লিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর সময়ে চিত্তরঞ্জন পার্কে পরিচয় হয় একজন শেফের সঙ্গে। তিনিই মধুমিতার মনে কেক নিয়ে ব্যবসার স্বপ্ন বোনেন। প্রশিক্ষণও দেন। প্রথমে দিল্লিতে, তার পরে শিলিগুড়িতে অনলাইনে। সেই সময়ে মেয়েকেও ওই প্রশিক্ষণে জুড়ে নেন মধুমিতা। প্রথমে বন্ধুদের কেক পাঠাতেন।
প্রশংসা পেতে শুরু করার পরে নেমে পড়েন ব্যবসায়। সাধ্য বাড়লে সাধ বাড়ে। এখন মধুমিতার ইচ্ছে কলকাতায় একটি কেকের আউটলেট খোলা। শিলিগুড়ি ছেড়ে কলকাতায় স্বপ্ন দেখার কারণ, উত্তরবঙ্গে এখনও কেক তৈরির ঠিকঠাক উপাদান মেলে না। সেই কলকাতায় দৌড়তে হয়। মধুমিতা বলেন, ‘অনেক উপাদান আমি বাড়িতে তৈরি করে নিই। তবে কলকাতায় আউটলেট খুললে উপাদান সংগ্রহ আরও সহজ হবে।’