কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
প্লাস্টিকের বন্দুকটার দিকে একনজরে তাকিয়ে ছিলেন সন্দীপ। কিছু পরেই খেলনা কামান আর সেনার খেলনা গাড়িটাও হাতে তুলে এদিক-ওদিক দেখতে লাগলেন।আট বছরের ছেলের শখ মেটাতে শনিবার সকাল সকাল হংকং মার্কেটে ছুটে আসেন চম্পাসারির বাসিন্দা সন্দীপ সুব্বা। হংকং মার্কেটের একটি খেলনার দোকানে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘টিভি, মোবাইলে আমার ছেলে শুধু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের খবর দেখছে। সব জায়গাতেই অপারেশন সিঁদুরের কথা শুনে আমাকে দু’দিন ধরে খেলনা বন্দুক, জিপ, কামান নিয়ে আসতে বলছে। বাধ্য হয়ে আজ বাজারে এসেছি।’
আরও পড়ুন: বিশ্বের প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’! ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন ঘটাল
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব যে শিশুমনেও পড়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন গরমের ছুটির কারণে অনেক স্কুলই বন্ধ। ফলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক ছেলেমেয়েই ঘরে বসে টিভির পর্দায় যুদ্ধের খবর থেকে চোখ সরাচ্ছে না। অনেকে আবার মোবাইল ফোনেই যুদ্ধের খবর দেখছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে রাত জেগে ভারত-পাক সংঘর্ষের খবর শুনছে স্কুল পড়ুয়ারা। আর এর প্রভাব সরাসরি পড়ুয়াদের মনে পড়ছে। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ উত্তম মজুমদারের কথায়, ‘কিছু বাচ্চা যুদ্ধের খবর দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। আর একটু বড় বাচ্চারা গোলাগুলির ঘটনায় আনন্দিত হচ্ছে। আবার যুদ্ধ লাগলে কী হবে, তা ভেবে বাচ্চাদের অনেকে অজানা আশঙ্কার দেশে পৌঁছে যাচ্ছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘কোভিডের সময় বাচ্চাদের নিয়ে এক ধরনের সমস্যা হয়েছিল। এখন অন্য ধরনের সমস্যা হচ্ছে। অভিভাবকদের তারা প্রশ্ন করছে, আমাদের তো বাংকার নেই। যুদ্ধ হলে কোথায় লুকোব? বাড়িতে বোমা পড়লে মরে যাব। এমন সব কথা বলছে। লোডশেডিং হলে ভাবছে ব্ল্যাক আউট হচ্ছে। তখন বাবা-মাকে বাচ্চারা ডেকে নিচ্ছে। এমন কেস আমার কাছে এসেছে।’
আরও পড়ুন: ‘যুদ্ধ’-র আবহে শান্তি চেয়ে রোষে দীপ্সিতারা
তবে ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষের মাঝে বাচ্চাদের একটি অংশ যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠছে। বিধান মার্কেটের খেলনার দোকানদার প্রসেনজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘খেলনা বন্দুক, জিপ, সৈন্য এসব বিক্রি করেছি। তবে এখন চিনের তৈরি খেলনার বদলে দেশে তৈরি খেলনাই আমরা বেশি বিক্রি করছি।’ রণজিৎ কর্মকার নামে এক দোকানদার বলেন, ‘অভিভাবদের সঙ্গে আসা বাচ্চারা নানারকম বন্দুক কেনার বায়না করছে। পাশাপাশি যুদ্ধের হেলিকপ্টার, প্লেন কেনার ঝোঁক রয়েছে। সবসময় খবর দেখার এটা প্রভাব। আমরাও সেইসব বিক্রি করছি।’
সংঘর্ষ বিরতি হলেও ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। আর এমনটা যে আরও কিছুদিন চলবে তা মনে করছেন মনোবিদরা। বিধাননগর সন্তোষিণী বিদ্যাচক্র হাইস্কুলের টিআইসি রুদ্র সান্যাল বলেন, ‘যেভাবে যুদ্ধ নিয়ে নিউজ চ্যানেলে চব্বিশ ঘণ্টা খবর হচ্ছে, তাতে ছোটদের ওপর মানসিক প্রভাব পড়ছে। ছোটদের অনেকে এই যুদ্ধকে ভিডিও গেমের মতো মনে করছে। যা মানসিক ভীতি তৈরি করতে পারে।’