“বিসর্জন”
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
শিউলী কৃষ্ণাদেবীর মাথা সিথানে বসে তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “মা, অত অস্থির হও না। তোমার শরীর খুবই অসুস্থ।”
“হাঁ মা, এবার থেকে আমি সুস্থ হয়ে উঠবো দেখবে। ”
“হাঁ মা।”
“হারে, তোমাদেরকে অনেক খোঁজ করো আমরা পায়নি, তোমরা আমাদের উপর রাগ করে কোথায় চলে গিয়েছিলে ?”
এবার মায়ের কাছে এক মেয়ে মাথা নীচু করে দেওয়ালে টাঙানো শ্বশুরমশায়ের মালা দেওয়া ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। তাই দেখে কৃষ্ণাদেবী বলে, “ওঃ বুঝেছি, মায়ের উপর এখনও রাগ কমেনি।”
তাই শুনে শিউলী বলে, “না মা না, আমরা রাগ করিনি।” এই বলে কৃষ্ণাদেবীর বুকে মাথা রেখে শিউলী কাঁদতে থাকে। আজ সেও তার মাকে হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে অনিলের হাত ধরে পথে পথে ঘুরেছে।
শোভায় বসে অনিলের মাথায় নানারকম চিন্তার জট পাকতে থাকে। একসময় বাইরে পায়ের শব্দে সেই চিন্তাগুলো ক্ষণিকের জন্য দূর হয়। দেখে নায়েবমশায়।
“নায়েবমশায় আপনি?”
“হাঁ, ছোটকর্তা, বড়কর্তা গত হয়ে যাবার পর কাছারির দেখাশুনার সমস্ত দায়িত্ব আমার উপর ছিল। এবার থেকে আপনি সেই দায়িত্ব নিয়ে আমায় সেই দায়মুক্ত করুন।”
“আমি! না না তা হয় না নায়েবমশায়, আপনিই দেখাশুনা করবেন। আমি এইসব কাজে কিছুই জানি না, কিকরে এত বড় দায়িত্ব নেব বলুন?”
অনিলের কথা শুনে নায়েবমশায় ফিরে যাচ্ছিল কি মনে করে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। পকেট থেকে কয়েকটা কাগজ বার করে অনিলের সামনের ছোট টেবিলে রেখে বলে, “বড়কর্তা পরলোকগমনের আগে একটা উইল করে গেছেন। উনার সম্পত্তির কিছু জমি – জায়গা ও টাকা পয়সা গ্রামের উন্নয়নের জন্য, ইস্কুল করার কাজে, বাঁধ পরিকল্পনার জন্য ইত্যাদির জন্য দান করে গেছেন। আর বাকী জমি – জায়গা, টাকা – পয়সা আপনার নামে লিখে পাকা উইল করে গেছেন। এটা হলো সেই উইল।” এবার একটু থেমে আবার বলে, “এই উইলটা একটু সময় করে দেখে সযত্নে সিন্দুকে রেখে দিবেন। ”
“ঠিক আছে নায়েবমশায়।” বাবার সময় থেকে তিনি এই বাড়ীতে চাকরি করছে, অনিলকে কোলে পিঠে মানুষ না করলেও পরম স্নেহ করে। তাই পুত্র সমতুল্য ছোটকর্তাকে সমস্ত সম্পত্তি বুঝাতে এসেছিল।
উইলখানি দিয়ে নায়েবমশায় সেইখান থেকে চলে যায়।