কলকাতার একটি হাসপাতাল এমন এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে, যা ট্রাফিকের ঝামেলা এড়িয়ে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের দ্রুত এমার্জেন্সিতে পৌঁছে দেবে! হ্যাঁ, কলকাতার বাইপাসের ধারে ডিসান হাসপাতাল আজ তাদের নতুন অ্যানেক্স টু বিল্ডিংয়ের ছাদে হেলিপ্যাড চালু করতে চলেছে। ডিসান হাসপাতালই কলকাতার প্রথম হাসপাতাল, যেখানে এই ধরনের হেলিপ্যাড পরিষেবা চালু হতে চলেছে। এই হেলিপ্যাড তৈরিতে প্রায় দু’বছর সময় লেগেছে, যা মূলত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের আসা-যাওয়া সহজতর করবে।
হেলিপ্যাডের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন এমার্জেন্সি রোগীকে উড়িয়ে এনে হাসপাতালে চিকিৎসা করা হবে। আজ, শুক্রবার বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে একটি হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলক উড়ান দিয়ে এই হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে।
হাসপাতালের ডিরেক্টর শৌলি দত্ত জানিয়েছেন, ‘নতুন বিল্ডিংয়ে ৪৫০টি বেড থাকবে, যার মধ্যে ১২০টি আইসিইউ বেড। আমরা বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং আমাদের শিলিগুড়ি ইউনিট থেকেও রোগী উড়িয়ে আনার পরিকল্পনা করছি।’
বর্তমানে কলকাতায় জরুরিকালীন রোগী পরিবহণের জন্য কেবল গ্রিন করিডোর ব্যবহৃত হয়। ২০১৮ সাল থেকে কলকাতা পুলিশের সহায়তায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য গ্রিন করিডোর ব্যবহার করা হয়েছে বহুবার। খুব কম সময়ে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে রোগীরা এসে পৌঁছেছেন কলকাতায়। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোগীদের প্রথমে কলকাতা বিমানবন্দরে নামানো হয়, তারপর সড়কপথে হাসপাতালে আনা হয়। নতুন হেলিপ্যাড এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুততর করবে।
শৌলি দত্ত বলেন, ‘এখন সরাসরি হেলিপ্যাডে অবতরণ করার ফলে রোগী পরিবহণের সময় অনেকটাই কমে যাবে। এতে চিকিৎসার মানও উন্নত হবে। আমরা ডিজিসিএ-র কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছি, সে জন্য কৃতজ্ঞ।’
এই উদ্যোগকে অন্য হাসপাতালের কর্তারাও প্রশংসা করেছেন। কারণ এটিই পূর্ব ভারতের প্রথম এমন উদ্যোগ, যা অনেক রোগীর জীবন বাঁচাতে পারবে।পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘এটি একটি মাইলফলক। এতে অনেক রোগীর জীবন বাঁচবে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরের অনেক হাসপাতালেই হেলিপ্যাড রয়েছে। আমাদের এখানেও কিছু থাকা প্রয়োজন ছিল। আশা করি, এর খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই থাকবে।’
তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি একটি ‘লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ’ হতে পারে। একটি হাসপাতালের প্রধান জানান, হেলিপ্যাড আদতে কেবল দেখার একটা প্রকল্প হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা কার্যকর করতে অনেকগুলো সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন, যা বেশ জটিল হতে পারে।
আরও পড়ুন: Siliguri: শিলিগুড়িতে হবে “নেতাজি ফ্রিডম কাপ” সাংবাদিক বৈঠকে বাইচুং ভুটিয়া
তবে বেশিরভাগেরই মত, হেলিপ্যাড পরিষেবা চালু হওয়ার মাধ্যমে কলকাতার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। জরুরি রোগীদের দ্রুত পরিবহণ, বিশেষত প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শহরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও কার্যকর হবে। যদিও এর খরচ এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, তবুও এটি শহরের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতে প্রথমবারের মতো এমন উদ্যোগ
দিশান হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভারতে এখনও পর্যন্ত কোনও হাসপাতালের ছাদে হেলিপ্যাড তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই পরিষেবা চালুর মাধ্যমে দিশান হাসপাতাল নিজেকে অন্য স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। আগে যেখানে হাসপাতালের ট্যাগলাইন ছিল ‘তোমার ছুটি, আমার নয়’, এখন সেটি বদলে হয়েছে, ‘যখন প্রতিটা সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ, তখন আমরা প্রথমে আসব।’
এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের গুরুত্ব
বর্তমান সময়ে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই পরিষেবার ক্ষেত্রেও রোগীকে প্রথমে বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে হয়। তারপর সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে হাসপাতালে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় বহু সময় নষ্ট হয়। কিন্তু দিশান হাসপাতালের হেলিপ্যাড পরিষেবা রোগীকে সরাসরি হাসপাতালে পৌঁছানোর সুযোগ দেবে, যা রোগীর জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।