কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
দুর্ব্যবহার, পেনশন ফাইলে সই না করা, স্বজনপোষণের মতো একাধিক অভিযোগ তুলে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতিকে অপসারণের দাবি তুলেছিলেন অধ্যাপকরা। সভাপতিকে সরাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শিলিগুড়ি কলেজের টিচার্স কাউন্সিল চিঠি দিয়েছিল। অধ্যাপকদের সেই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে অবশেষে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর শিলিগুড়ি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদ থেকে জয়ন্ত করকে সরিয়ে দিল। জয়ন্তর জায়গায় ডঃ জিনিয়া মিত্রকে পরিচালন সমিতির নতুন সভাপতি করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তরফে বুধবার দুপুরে ই-মেল মারফত কলেজে নতুন সভাপতি সম্পর্কিত নোটিশটি পাঠানো হয়। জয়ন্তকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় টিচার্স কাউন্সিলে খুশির হাওয়া।
২০১৬ সালের ২৮ মে থেকে জয়ন্ত কর কলেজের সভাপতির দায়িত্ব সামলে আসছিলেন। এই সময়ে তাঁর সঙ্গে অধ্যাপকদের বিবাদের একাধিক ঘটনা সামনে আসে। জয়ন্তর অপসারণ চেয়ে কলেজের অধ্যাপকরা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে চিঠি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের সঙ্গেও দুই দফায় দেখা করে জয়ন্তর অপসারণ দাবি করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ অবাক কান্ড! বন্দে ভারত হয়ে গেল শতাব্দি
এ বিষয়ে শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সুজিত ঘোষ বলেন, ‘ডঃ জিনিয়া মিত্র আগে থেকেই কলেজ পরিচালন সমিতিতে রাজ্য সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে ছিলেন। তাঁকেই সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে ডঃ অভিজিৎ দেব ও ডঃ সুপ্রকাশ রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২৪ জুলাই নোটিফিকেশন হয়। তা এদিন আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ অন্যদিকে জিনিয়ার বক্তব্য, ‘সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরকে ধন্যবাদ। কলেজের অধ্যক্ষ ফোন করে আমায় খবরটা দিয়েছেন। এই কলেজের অনেক সুনাম রয়েছে। সকলে মিলে আমরা কলেজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।’ অন্যদিকে, নির্দেশিকার বিষয়টি নিয়ে জয়ন্তর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন সুইচ অফ থাকায় প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জয়ন্তকে সভাপতি পদ থেকে সরাতে ১৭ মে কলেজের টিচার্স কাউন্সিল বৈঠকে বসে। সেদিন জয়ন্তকে অপসারণের দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে কলেজের ৬৩ জন অধ্যাপকের মধ্যে ৫৭ জন সই করেছিলেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক ডঃ ঝিনুক দাশগুপ্ত এবং অভিজিৎ মজুমদার ও এক শিক্ষাকর্মীর পেনশন ফাইল তৈরির ক্ষেত্রে জয়ন্ত অসহযোগিতা করেছেন। তিনি চেক, বিল এবং অর্থ সম্পর্কিত কাগজপত্রে সই না করতে চাওয়ায় বা দেরি করায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সমস্যা হয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়। পাশাপাশি বিমা ও লাইব্রেরির বই কেনার ক্ষেত্রে কীভাবে জয়ন্ত স্বজনপোষণ করেছেন সেই কথাও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। তুলে ধরা হয় অনেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে অপমানের কথাও।
আরও পড়ুনঃ ‘এবার কত দেব? ৯০… ৯৫…’, বলেই ১ লাখ ১০ হাজার; ২৬ এর আগে কল্পতরু মমতা
এদিন রাজ্যের নির্দেশিকা পেতেই টিচার্স কাউন্সিলের সদস্যরা পুরনিগমে গিয়ে মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে আসেন। টিচার্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি দর্শন বর্মন বলেছেন, ‘জয়ন্ত করকে সভাপতি পদ থেকে সরানোয় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। এ খবরে কলেজের সকল অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী খুশি। আমরা দুর্নীতিমুক্ত কলেজ গড়তে চেয়েছিলাম। আগামী সপ্তাহে কলেজের প্ল্যাটিনাম জুবিলির অনুষ্ঠানের জন্য টিচার্স কাউন্সিলের বৈঠক ডাকব।’