Saturday, 5 July, 2025
5 July, 2025
Homeউত্তরবঙ্গSiliguri: অ্যাডভেঞ্চারের মাসুল দেবে প্রকৃতি! তিস্তাকে নিংড়ে বিনোদনের পশরা

Siliguri: অ্যাডভেঞ্চারের মাসুল দেবে প্রকৃতি! তিস্তাকে নিংড়ে বিনোদনের পশরা

উত্তরের সব থেকেই বড় এই নদীর পুরোটা জুড়েই আজ যেন বিনোদন ক্ষেত্র। তিস্তা নিংড়ে চলছে নানা ব্যবসা। তাতে তিস্তার লাভ হচ্ছে কি আদৌ?

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:

তুষারে ঢাকা শৃঙ্গ পেরিয়ে সংকীর্ণ গিরিখাত দিয়ে বেরিয়ে আসে সাদা সফেন তিস্তা। একটু পরে মিলিত হবে রঙ্গিতে। সেই যে পাহাড়ি বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া, তারপর সেবক থেকে অর্গলহীন সমতল ভূমি, জঙ্গল চেরা পথ। গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ ছুঁয়ে ওপারে এগিয়ে গেলে জলপাইগুড়ি শহর ডান পাশে, বাঁ দিকে থাকছে দোমহনি। পরে আসবে বার্নিশ ঘাট। হলদিবাড়ি পেরিয়ে মেখলিগঞ্জে তিস্তা বিরাট বিস্তৃত ও তার বাংলাদেশের ভ্তিরে প্রবেশ।

উত্তরের সব থেকেই বড় এই নদীর পুরোটা জুড়েই আজ যেন বিনোদন ক্ষেত্র। তিস্তা নিংড়ে চলছে নানা ব্যবসা। তাতে তিস্তার লাভ হচ্ছে কি আদৌ? নাকি একটু একটু করে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তিস্তার।

পাহাড়ি তিস্তার উজান ধরে ধরে আসার ইতিহাস বহু প্রাচীন। পেশক রোড ধরে দার্জিলিংয়ের পাহাড় ডিঙিয়ে তিস্তার দেখা মিলতো। স্বাধীন দেশ তখন তিব্বত। তিস্তার পাড় ধরে ধরেই নিত্য যাতায়াত ছিল। তখন তিস্তার এক পাশ ধরে ট্রেন লাইন। সে পথের যাত্রী হয়ে এসেছেন রবীন্দ্রনাথও।

আরও পড়ুন: নজরে নীলবাড়ির লড়াইও! উত্তরবঙ্গের শিল্পবৈঠকে দরাজ মমতা, একগুচ্ছ প্রকল্প উদ্বোধন, নতুন বিনিয়োগেরও ঘোষণা

সময় যত এগিয়েছে, এই পথে পর্যটন ব্যবসার ইউএসপি হয়ে উঠেছে তিস্তা। হুমড়ি খেয়ে পড়া বাড়িঘর, রেস্তোরাঁ, পানশালা, গুমটি ঘর। নীচে চলছে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজ়মের অংশীদার তিস্তা র‍্যাফটিং। রাজ্য পূর্ত দপ্তরের তিস্তার বুকে সবথেকে ঐতিহ্যশালী বাংলো ছিল কালিঝরা।

আজ সেটি কৌলীন্য হারিয়েছে। সেই বাংলোর পাশ দিয়ে তিস্তার সাদা চর যেন সমুদ্র সৈকতের মতো দেখায়। সেখানে নিত্যদিন ফটোগ্রাফারদের আনাগোনা। প্রি–ওয়েডিং যুগলের প্রত্যেকটি পোজ়ে এই তিস্তাকে ক্যানভাসে চাই–ই চাই।

পাঁচটি বড় বাঁধ তৈরি করে এনএইচপিসি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে তিস্তার উপরে। পাহাড়ি তিস্তাকে এতগুলি বাঁধ পেরিয়ে সেবক আসতে ভীষণ ক্লান্ত দেখায়। কিন্তু, সে দিকে কারও নজর নেই। নেই বলেই সেবকের রেললাইন পেরোতেই নীচে তিস্তার সঙ্গে নন্দী নদীর মিলন স্থলে নদীর বুকে বিরাট পাথর ভাঙার কল বসেছে। এই পাথর ভাঙার কল বৈধ কি না, তা নিয়ে মামলা চলছে গ্রিন ট্রাইব্যুনালে। তাতেও কি তিস্তার কিছু যায়–আসে!

আরও পড়ুন: চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট!  ‘সঞ্জয় ছাড়াও তিলোত্তমার দেহ স্পর্শ করেছিলেন আরও একজন’; তিনি কে?

অভিমানী তিস্তার দু’পাশে শাল–সেগুনের জঙ্গল থাকার কথা ছিল। শেষ কুড়িটা বছরে সেই প্রকাণ্ড জঙ্গল প্রায় সাফ হয়ে গেছে বললেই চলে। নদীর গতি হয়ে গেছে এলোমেলো। ডান প্রান্তের বহু পুরোনো গ্রাম চুমুকডাঙি তিস্তার ক্ষয়ক্ষতিতে উঠে যাওয়ার জোগাড়। আর বিপরীত দিকে ইতিমধ্যেই তিস্তার গ্রাসে চলে গেছে টোটগাও বস্তি। আর একটু এগোলে গজলডোবা।

রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে রাজ্যের সব থেকে বড় ট্যুরিজ়ম হাব ‘ভোরের আলো’ গড়ে উঠেছে এখানে। তিস্তার বুকে পরিযায়ী পাখি দেখার যে বিরাট এলাকা, তারও গাল ভরা নাম ‘পাখি বিতান’।

বড় বড় সরকারি–বেসরকারি হোটেল, বহু পিচের রাস্তা, বাহারি বিদেশি সেতুর নকল করে ম্যাকিনটোস বার্নের ব্রিজ। তার নীচে সার দিয়ে গজলডোবার বিখ্যাত হয়ে ওঠা চিংড়ির চপের দোকান এবং ছুটির দিনগুলিতে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়, নৌকা ভ্রমণ ইত্যাদি। মানুষের দল চলে গেলে দেখা যায় তিস্তায় ভাসছে জঞ্জাল, প্লাস্টিক।

তিস্তা এগোয় জলপাইগুড়ি শহরের দিকে। যেখানে জলপাইগুড়ি শহরের যাবতীয় জঞ্জাল নিয়ে তিস্তায় এসে ফেলতে শুরু করেছে করলা নদী। করলার দূষণ জলপাইগুড়ির অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। সেটাই তিস্তা দূষণের অন্যতম কারণ।

হলদিবাড়ি মেখলিগঞ্জের চরে নানা চাষের আয়োজন। বাদাম, তরমুজ তার মধ্যে মুখ্য। রাসায়নিক কীটনাশক অবাধে প্রয়োগ সেখানে। মিশছে সেই তিস্তাতেই। ‘মন খারাপের ব্যাগের ভিতর’ গানে ‘ব্যাকুল হলে তিস্তা’র কথা বলা ছিল। মন আজও তিস্তার কাছে যেতে চায় বৈকি, কিন্তু তিস্তা কি ব্যাকুল হতে চায় আগের মতো? নিংড়োতে থাকা তিস্তার কাছে আর কতই বা প্রত্যাশা করা যায়?

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন