Tuesday, 14 October, 2025
14 October
Homeআবহাওয়াWeather: কি হবে এই বছর! প্রবল ও দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডা এইবার শীতে

Weather: কি হবে এই বছর! প্রবল ও দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডা এইবার শীতে

এইবার শীত হতে পারে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

তুষারপাত ঘটেছে । লাদাখ সহ কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে ভারী তুষারপাতের ঘটনা ঘটেছে । এদিকে বর্ষা বিদায়ের সাথে সাথে উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে পারদ নিম্নগামী হতে শুরু করেছে । অপরদিকে বাংলা সহ পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশে বর্ষা বিদায়ের প্রক্রিয়া চলাকালীন রাতে দিকে পারদ কিছুটা করে নামছে ।

এখন প্রশ্ন ঠান্ডা কিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং কতদিন থাকবে, কি পরিস্থিতি হতে চলেছে এবার ঠান্ডায় । এক কথায় অক্টোবর মাসের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত, শীতের দাপট থাকার সম্ভাবনা। সেটাই একটু বিস্তারিত ভাবে লেখার চেষ্টা করছি এখানে।

আরও পড়ুনঃ ‘নাগালের বাইরে’? বিধাননগরের ১৪টি থানার সব মোবাইল নম্বরই ‘গলত হ্যায়’!

এই বছর তৈরি হচ্ছে এক শক্তিশালী ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি—যার ফলে এইবার শীত হতে পারে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী। প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেলে ‘লা নিনা’ তৈরি হয়। এর ফলে গ্লোবাল বায়ুপ্রবাহ ও মৌসুমি প্যাটার্নে বড় পরিবর্তন ঘটে, যার প্রভাব সরাসরি পড়ে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়ায়। ‘লা নিনা’ হলো এল নিনোর ঠিক বিপরীত অবস্থা। এল নিনোতে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাংশ উষ্ণ হয়ে ওঠে, আর লা নিনায় তা ঠান্ডা হয়। এই পরিবর্তন গ্লোবাল জলবায়ুকে প্রভাবিত করে — কোথাও অতিবৃষ্টি, কোথাও খরা, আবার কোথাও তীব্র শীত ডেকে আনে।

‘লা নিনা’ হলো প্রশান্ত মহাসাগরের বিষুবীয় অঞ্চলের সমুদ্রজলের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া — যা বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার ধরণ বদলে দেয়। এটি এল নিনো-সাউদার্ন অসিলেশন (এনজো) চক্রের শীতল পর্ব। এই সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জেট স্ট্রিম বা বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহের ধরণ পালটে যায়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে মৌসুমি বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও ঝড়-বৃষ্টির তীব্রতায়। ভারতের ক্ষেত্রে, এই পরিবর্তন মানে হতে পারে— গড়ের তুলনায় বেশি ঠান্ডা শীত পড়া, দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডা হাওয়া ও তুষারপাত, হিমালয় অঞ্চলে প্রবল তুষারপাত, যা নদী ও জলাধারের জন্য উপকারী হলেও চলাচল ও জনজীবনেবিঘ্ন ঘটাতে পারে।

বর্তমানে প্রশান্ত মহাসাগরে নিরপেক্ষ পরিস্থিতি চলছে — অর্থাৎ, এল নিনো বা লা নিনা কিছুই সক্রিয় নয়। তবে এইবছরেই অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৫৩% থেকে ৭১% সম্ভাবনা রয়েছে লা নিনা সক্রিয় হওয়ার। যদি দুর্বল লা নিনাও সক্রিয় থাকে তাহলেও ভারতের শীতকে তীব্র করে তুলতে পারে।

লা নিনা চলাকালে নিম্নস্তরে এক ধরনের ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়, যা উত্তর দিকের বরফঠান্ডা হাওয়া দক্ষিণে টেনে আনে। এছাড়াও এর ফলে ঠান্ডা প্রবাহের সংখ্যা ও স্থায়িত্ব দুই-ই বাড়ে। এই অবস্থায় কৃষি, স্বাস্থ্য, জ্বালানি খরচ এবং অবকাঠামোর উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। যদি ২০২৫ সালের শেষের দিকে লা নিনা পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাহলে উত্তর ভারতে প্রবল শীত পড়বে, দীর্ঘস্থায়ী তুষারপাত ও টানা শৈত্যপ্রবাহ চলবে, হিমালয়ে ভারী তুষারপাত হবে। মধ্য ভারত থেকে পূর্ব ভারতে প্রবল ঠান্ডার প্রভাব থাকবে । আর লা নিনা শক্তিশালী যদি হয়, তাহলে আগামী মাসগুলিতে শীতের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ের সম্ভাবনা অধিক মাত্রায় থাকে ।

আরও পড়ুনঃ ‘হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা মৌলিক অধিকার নয়’, জানিয়ে দিলো সুপ্রিম কোর্ট; ‘আরাত্তাই’ ব্যবহারের পরামর্শ

এই বছর, লা নিনা পরিস্থিতির কারণে উত্তর ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে, দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি সাথে মধ্য ভারতের মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, পশ্চিমের রাজস্থান ও পূর্ব ভারতের বিহার এবং ঝাড়খণ্ডে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। উত্তর পূর্ব ভারতের সিকিম ও অরুনাচল প্রদেশেও পারদ অস্বাভাবিক পতনের সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বা অন্যান্য বাকি রাজ্যের ক্ষেত্রেও ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা নির্ভর করবে সামগ্রিক আবহাওয়ার পরিস্থিতির উপর।

দেখে নেওয়া যাক বঙ্গে ঠান্ডার প্রভাব কেমন থাকবে :

সংক্ষেপে বললে বেশি ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শীতের শুরু আগে থেকেই ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে এবং এই বছর তা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে।

  • দার্জিলিং এবং উত্তরবঙ্গ

লা নিনা পরিস্থিতির কারণে উত্তরবঙ্গে শীত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত এখানে শীতকাল সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে এবং তাপমাত্রা ৭ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে যেতে পারে। দার্জিলিং ও তার সংলগ্ন অংশে সারা বছরই একটি মনোরম আবহাওয়া থাকে, তবে শীতকালে এখানকার ঠান্ডা আরও তীব্র হয়। এই বছর শীতের তীব্রতায় আধিক্য এবং তুষারপাতের সম্ভাবনা থাকছে ।

  • কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গ

লা নিনা পরিস্থিতির কারণে দক্ষিণবঙ্গেও শীত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত এখানে শীতকাল সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে এবং ৭ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে যেতে পারে কিছু জেলার তাপমাত্রা।

দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে ঠান্ডা অধিক অনুভূতি হয় যে জেলা গুলোতে তার মধ্যে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া অন্যতম । পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় ঠান্ডা বেশি পড়ার প্রধান কারণ হলো এই অঞ্চল দুটি উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চলে অবস্থিত এবং এদের মাটির ধরণ ও ভৌগলিক অবস্থান। এখানকার মাটি সাধারণত পাথর ও বালি-কণা সমৃদ্ধ, যা দ্রুত ঠান্ডা হয় এবং তুলনামূলকভাবে কম জল ধারণ করে। এছাড়াও, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বেশি হওয়ায় এখানে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়, যার ফলে শীতকালে ঠান্ডা বেশি অনুভূত হয়। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া সহ পশ্চিমের জেলা গুলোতে এবছরে পারদ আরও নামতে পারে । ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পুরুলিয়াতে পারদ ৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছিল । এই বছরেও ৫ ডিগ্রির আশেপাশে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা। দক্ষিণবঙ্গের গ্রাম্য এলাকা সহ কলাইকুণ্ডা ও পানাগড়, শ্রীনিকেতন, কৃষ্ণনগর, বহরমপুর সহ আসানসোলের মত কিছু অংশে রেকর্ড পারদ পতনের সম্ভাবনা।

কলকাতা সহ তার সংলগ্ন অংশে ১৯০৭ সালে পারদ ৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড রয়েছে যা সর্বকালের সর্বনিম্ন পারদ রেকর্ড হয়ে আছে । এক দশক আগেও কলকাতার পারদ শীতে নিয়মিত ১০ ডিগ্রির আশেপাশে নেমে আসতো । তার পর থেকে বর্তমান সময়ে বায়ুদূষণ ও আমাদের নির্বুদ্ধিতার ফলস্বরূপ সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় বৃদ্ধি নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকবার পারদ পতন ঘটলেও । গত দশ বছরে (২০১৫-২০২৪) কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৫° সেলসিয়াস, যা ২০১৮ সালে রেকর্ড করা হয়েছিল। যদিও বিভিন্ন বছরে তাপমাত্রা ১১° সেলসিয়াসের কাছাকাছি নেমেছে, যেমন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ১১.৭° সেলসিয়াস ছিল, তবে ২০১৮ সালের ১০.৫° সেলসিয়াসই এই দশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত ৫০ বছরে রেকর্ড উষ্ণ কলকাতা ডিসেম্বর ২০২২ সালেই ঘটেছে।

বর্তমান বছরে কেমন ঠান্ডা থাকবে কলকাতায় !! সম্পূর্ণ পরিস্থিতি নির্ভর করছে বাতাসের ধূলিকণা ও সাগরের পরিস্থিতির উপর । বাতাসে অধিকমাত্রায় ধূলিকণার পরিমাণ অবস্থান করায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পতন কতটা হবে বা হতে পারে সঠিক ভাবে এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব না হলেও একটা ধারণা করা যেতে পারে যে পারদ ১০° ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা । এবং লা নিনা পরিস্থিতিতে বাতাস যদি দূষণমুক্ত থাকে পারদ ১০ এর নীচে নেমে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়

পরিশেষে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। ফলে এমনি পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় । এখানে একটা ধারণা দেওয়া হলো শুধুমাত্র । তবে হ্যাঁ, বর্তমান বছরে দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডা, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পতন ও সাথে বৃষ্টি এবং দূর্যোগের সম্ভাবনাও থাকছে ।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন