কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে দু’টো ভিন্ন ছবি। একদিকে ডুয়ার্স ও তরাইয়ে উৎপাদন হু হু করে কমছে, অন্যদিকে পাহাড়ের চা বাগানগুলিতে দেখা যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। জুন মাসে যেখানে সমতলের চা শিল্প বিপাকে, সেখানে পাহাড়ে কাঁচা চা পাতার উৎপাদন বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। এই তথ্য উঠে এসেছে টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।
চলতি বছরের জুন মাসে ডুয়ার্সে উৎপাদন কমেছে প্রায় ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার কেজি, আর তরাইয়ে কমেছে ১ লক্ষ কেজির বেশি। গতবছরের তুলনায় এই বছর ডুয়ার্সে উৎপাদন ৬৪ লক্ষ ৮৪ হাজার কেজি থেকে নেমেছে মাত্র ৫৮ লক্ষ কেজির ঘরে। তরাইয়ে একইভাবে ১৬ লক্ষ ২৬ হাজার কেজির জায়গায় উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ লক্ষ ২০ হাজার কেজি।
আরও পড়ুন: হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন ভারতীয় পর্যটক! কতটা ‘সর্বনেশে’ কিমের দেশ
কিন্তু পাহাড়ে দৃশ্যপট একেবারেই আলাদা। গত বছর যেখানে জুনে উৎপাদন ছিল ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৮৬ কেজি, এবারে তা বেড়ে হয়েছে ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৪১ কেজি। অর্থাৎ, উৎপাদন বেড়েছে ১ লক্ষ ৭ হাজার কেজির বেশি। কালিম্পং বাদে পাহাড়ের প্রায় সব এলাকায় দেখা গেছে এই বৃদ্ধি।
টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন বা TRA-র ব্যখ্যা অনুযায়ী, আবহাওয়ার তারতম্যই এই পার্থক্যের মূল কারণ। জুন মাসে ডুয়ার্সে যেখানে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৫০৫ মিলিমিটার, যেখানে গত বছর হয়েছিল ১২১৪ মিলিমিটার। বৃষ্টির দিনও কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ১৮ দিনে। তাপমাত্রা বেড়েছে ৩৪.৭ ডিগ্রি থেকে ৩৬.৯ ডিগ্রিতে।
তরাইয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ। জুনে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩২৯ মিলিমিটার, যা আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ২ ডিগ্রির বেশি।
আরও পড়ুন: রবিবারের পার হলেই ১০ জেলায় ভারী বৃষ্টি, পাক খাচ্ছে একসঙ্গে ৩ ঘূর্ণাবর্ত
তবে পাহাড়ের ক্ষেত্রে একই রকম আবহাওয়া সত্ত্বেও উৎপাদনে এমন উন্নতি কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ি চা বাগানগুলিতে উন্নত চাষের পদ্ধতি এবং মাটির স্বাভাবিক আর্দ্রতা বেশি। যার ফলে তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাতের মধ্যেও উৎপাদনে প্রভাব পড়েনি।
চা বোর্ড ও উৎপাদক সংগঠনগুলির মতে, এই প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগজনক। কারণ ডুয়ার্স-তরাই অঞ্চলে চা উৎপাদনের উপর বহু মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের এই ইতিবাচক চিত্র কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে গোটা উত্তরবঙ্গের চা অর্থনীতিকে।