সৌম্য পালিত, কলকাতা:
আজ বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস। শুনতে খুব সুন্দর, বলতেও, কিন্তু বাস্তব বড্ড কর্কশ। প্রতি বছর এই দিন উদ্যাপন করা হয় রাষ্ট্র তথা সরকারকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে প্রেস বা সংবাদমাধ্যমকে দেশ ও দশের স্বার্থে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়াটা কতটা জরুরি। প্রতি বছর চেনা-অচেনা বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিককে মুখোমুখি হতে হয় হিংসার, খবর করা নিয়ে তাবেদারি শুনতে হয় কিংবা পিছিয়ে আসার জন্য প্রাণান্তকর চাপের মধ্যে পড়তে হয়। এই বিশেষ সেই সমস্ত সাংবাদিকদের স্মরণ করার জন্য যাঁরা খবর করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে। এই বছর এই বিশেষ দিন উদ্যাপনের মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের উপর নজরদারি নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ। এইবারের থিম হল ‘Journalism under digital siege’। বলাই বাহুল্য, পেগাসাস পরবর্তী পৃথিবীতে সবাই আজ নজরদারির আওতায় কম বেশি। কিন্তু সাংবাদিকের ভয় সবচেয়ে বেশি, কারণ সঠিক খবর করতে গিয়ে অনেক সময়েই তাঁকে সরকার বিরোধী বা ক্ষমতাসীন মানুষের বিপক্ষে এগোতে হয়। এই রাস্তায় বাড়তি কোনও রোজগার নয়, অনেক ক্ষেত্রেই নেই কোনও সম্মানও— কিন্তু কাজের প্রতি ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে। বর্তমানে যেভাবে ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো এবং সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থারা সারা দিন-রাত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে অনলাইনে এবং অফলাইনে, যার ফলে সাংবাদিকদের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং রাষ্ট্রের রোষানলে পড়ে জীবন বিপন্ন হচ্ছে। সারা পৃথিবী জুড়েই সাংবাদিকতায় এসেছে বদল।
দীর্ঘ দুই বছর কোভিড নিয়ে টানাপোড়েনে অনেকেই কর্মহারা হয়েছেন। অনেক সংবাদসংস্থা রাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু সাহায্যের বিনিময়ে একটু বেশিই দিতে হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে সরকারি মুখপাত্র হয়ে ওঠার। প্রতিবাদের ভাষা হয়েছে স্তিমিত। দ্বিতীয়ত, কাগজের মাত্রাছাড়া মূল্যবৃদ্ধির জন্য ইন্টারনেটের মুখাপেক্ষী হতে হয়েছে অনেককেই। কিন্তু সংস্থার কোষাগার ভরার কোনও জাদুদন্ড বা ফর্মুলা নেই। এর ফলে অনেক সাংবাদিককেই বিকল্প রোজগার নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কেউ লেখালিখির সঙ্গে মুদির দোকান চালাচ্ছেন, কেউ মোবাইলের টপ আপ বিক্রি করছেন, আবার কেউ কেউ কায়িক পরিশ্রমের দিকে নজর দিয়েছেন। বেশিরভাগ সাংবাদিকদের কোনও পেনশনের ব্যবস্থা নেই।
কোভিড পরবর্তী সময়ে অনেকেই অথৈ জলে পড়েছেন। যদি নিরাপত্তার দিকটি দেখা হয়, বলা যেতেই পারে যে বিশ্ব জুড়েই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দিকটি আজ প্রশ্নের মুখে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৪৫ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জন পুরুষ এবং ৫ জন মহিলা সাংবাদিক। এই তালিকার ২৮ জনকে রীতিমত টার্গেট করা হয়েছিল তাদের কাজের জন্য, ৩ জন মারা গিয়েছেন সংঘর্ষ নিয়ে রিপোর্টিং করার সময়, ২ জন মারা গিয়েছেন ঝামেলার মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ একটা জিনিস পরিষ্কার যে সাংবাদিকতা কোনও ভাবেই আর নিরাপদ কোনও চাকরির মধ্যে বলা যেতে পারে না। যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয় তাহলে মানবাধিকারের দিক থেকে অনেক দেশেই পরিস্থিতি সঙ্গীন হবে। সংবাদমাধ্যম না থাকলে যে কোন দেশেই গনতন্ত্রের হাল হকিকত প্রশ্নের মুখে পড়বে।