সোমবার দুপুরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের একটি পোস্ট হঠাৎ অনেকেরই নজর কেড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু ফুটেজ নিয়ে তৈরি একটি শর্ট ভিডিও-র পোস্ট কপিতে লেখা বাংলার বাঘিনী!
সময়ে বিধানসভা নির্বাচন হলে আর মাত্র ১০ মাস বাকি। তার মধ্যে দু’মাস বর্ষা, দু’মাস দুর্গাপুজো-কালীপুজো আর একমাস বড়দিন ও নতুন বছরের উৎসব করেই কেটে যাবে। অর্থাৎ তৃণমূল বা বিজেপির ঠিকঠাক প্রচারের জন্য রয়েছে পাঁচ মাস সময়। তৃণমূলের এদিনের পোস্ট দেখেই অনেকে আন্দাজ করতে শুরু করেছেন, তবে কি জল মাপছে আই-প্যাক?
আরও পড়ুন: আলো জ্বলছে, পাখা ঘুরছে; কাজ লাটে চুঁচুড়া পুরসভায়
কেন এই ধারণা হল?
তৃণমূলেরই এক নেতা তথা মন্ত্রীর কথায়, কোনও স্লোগান তো এমনি-এমনিই তৈরি হয় না। তার একটা ন্যারেটিভ থাকে। যেমন ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের স্লোগান ছিল, ‘তৃণমূলের গর্জন, বাংলা-বিরোধীদের বিসর্জন।’ কিন্তু সেই স্লোগান বাজারে ছাড়ার অনেক আগে থেকে তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা শুরু হয়েছিল। বিজেপি যে বাংলা বিরোধী তা জনমনে প্রতিষ্ঠিত করতে ভোটের অন্তত সাত মাস আগে থেকে কর্মসূচি নিতে শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে প্রথমে দিল্লিতে ও পরে কলকাতায় রাজভবনের সামনে ধর্না দিয়েছিলেন অভিষেক। পরে রেড রোডে মঞ্চ বেঁধে ধর্নায় বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আবার একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের স্লোগান ছিল ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।’ ওই স্লোগানে পৌঁছনোর আগেও জমি তৈরি করেছিল আই-প্যাক। বাংলার নিজের মেয়েই যে নাগরিকদের সবার খেয়াল রেখে চলেছেন, সেই ধারণা তৈরি করতে একে তো ‘দিদিকে বলো’ প্রচার হয়েছিল। সেই সঙ্গে ভোটের সাত-আট মাস আগেই থেকেই বিজেপিকে বহিরাগত বলে দেগে দেওয়া শুরু করেছিল তৃণমূল।
‘বাংলার বাঘিনী’ স্লোগান তাই কৌতূহল বাড়িয়েছে। সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে যেমন ফোঁস করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার পর থেকেই এই ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের কালীঘাট ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক চরিত্র ‘বাংলার বাঘিনী’ শব্দবন্ধের সঙ্গে ভালমতোই মিশে যায়। দিদির মধ্যে সেই রাজনৈতিক আগ্রাসন শুরু থেকেই রয়েছে। তাই সংবাদমাধ্যমেও তাঁর সম্পর্কে ‘অগ্নিকন্যা’ বা সেই গোত্রের বিশেষণ বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। আবার বাঘিনী যেমন তাঁর সন্তানদের আগলে আগলে রাখেন, তেমনই দিদিও বাংলার মানুষের প্রতি যত্নশীল।”
তবে পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, হতে পারে এখন জল মাপা শুরু করেছে আই-প্যাক। চূড়ান্ত স্লোগান হয়তো ভিন্ন হবে। একুশের বিধানসভা ভোটে ‘বাংলার নিজের মেয়ে’ বলে যে স্লোগান তুলেছিল তৃণমূল তার নেপথ্যে মস্তিষ্ক ছিল প্রশান্ত কিশোরের। এখন পিকে আর আই-প্যাকে নেই। প্রায় সবটাই দেখেন প্রতীক জৈন।
আরও পড়ুন: সকাল থেকেই বেআইনি পার্কিং উধাও; রাস্তাতেই বচসায় জড়ালেন তৃণমূল ও বিজেপি কাউন্সিলররা
লোকসভা ভোটের পর তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রসায়নে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল, যে প্রতীক কিছুটা আড়ালে চলে যান। দলের প্রবীণ কয়েকজন নেতার সাময়িক ভাবাবেগ রাখতে দিদিকেও বলতে হয় ‘প্যাক-প্যাক’ ইত্যাদি। কিন্তু আই প্যাক ফের ফর্মে ফিরেছে। সম্প্রতি কয়েক মাসের ব্যবধানে দু’বার নবান্নে যেতে দেখা গিয়েছে প্রতীককে। এমনকি জেলা থেকে ব্লক সভাপতির জন্য যে সব সুপারিশ এসেছে সেই ফাইলও এখন গেছে প্রতীকের কাছে।
চব্বিশের ভোটের মতোই স্লোগান লেখা, তার ন্যারেটিভ ও ক্ষেত্র তৈরি করার দায়িত্ব এবারও তাঁর কাঁধেই। দেখা যাক, ‘বাংলার বাঘিনী’ স্লোগানে কতটা সাড়া পান তাঁরা।