সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
পুজোর মণ্ডপে মণ্ডপে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। দুর্গাপুজো নিয়ে যেমন আবেগের শেষ নেই, তেমনি স্থানভেদে এই পুজোর কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। দিনহাটা-১ ব্লকে ভেটাগুড়ি চৌপথি বারোয়ারি দুর্গা মন্দিরের পুজো সেরকমই একটি। এখানে দেবী লাল রঙে সজ্জিত। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই লাল রূপ শক্তি, সাহস আর সমৃদ্ধির প্রতীক।
আরও পড়ুনঃ ‘আশিতে আসিও না’ সিনেমার সেই সিন এখন প্রায়শই দেখা যাচ্ছে শিলিগুড়িতে!
ইতিহাস বলছে, কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ যখন ভেটাগুড়িতে রাজধানী স্থাপন (১৭৮৩-১৮৩৬ সাল) করেছিলেন তখন থেকেই শুরু হয় এই লাল দুর্গার আরাধনা। এখানে বড়োদেবীর অনুকরণে প্রতিমা গড়ার রীতি চালু হয় সেই সময়। তখন থেকে আজ অবধি রাজ আমলের বহু নিয়মকানুন অপরিবর্তিত রয়ে গিয়েছে এই পুজোয়।
পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত এখানে দুজন দেউরি নিয়মিত কাজে নিযুক্ত থাকেন। প্রথা অনুযায়ী এই দায়িত্ব আজও বংশপরম্পরায় চলে আসছে। এখানকার প্রবীণ দেউরি হরিপদ দেউরির কথায়, ‘আমরা কয়েক প্রজন্ম ধরে এই পুজোয় নিযুক্ত। রাজ আমলের সময় যেভাবে মাকে আরাধনা করা হত, আজও আমরা সেই একই নিয়মে মায়ের আরাধনা করি।’
ভেটাগুড়ির লাল দুর্গার পুজোয় কোনও চাঁদা তোলা হয় না। ভক্তদের দানেই সমস্ত আয়োজন করা হয়। থিমের চাকচিক্য নয়, নিয়মনিষ্ঠাই এই পুজোর স্বতন্ত্রতা। পুজো কমিটির সম্পাদক শিবানন্দ রায় বলেন, ‘রাজ আমল থেকে এই পুজো হয়ে আসছে। তবে ঠিক কবে থেকে এই পুজো শুরু হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। শুনেছি ভেটাগুড়িতে রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিন পর এই বারোয়ারি পুজোর সূচনা।’
আরও পড়ুনঃ ফাঁকা মাঠে গোল মমতার! পুজোর ভিড়ে টিমটিম করছে বিজেপি, বামেরা গ্যালারিতেই
এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর আচার-অনুষ্ঠানে। সাধারণত দুর্গাপুজোর বিসর্জন দশমীতে হয়, কিন্তু এখানে বিসর্জন হয় একাদশীতে। অষ্টমীর দিন অনুষ্ঠিত হয় কুমড়োবলি। যা অসুর বিনাশের প্রতীক। নবমীতে রান্না হয় বিশেষ ভোগ। যা সমবেতভাবে ভক্তরা তৈরি করেন। স্থানীয় অনুপমা দাস বললেন, ‘ছোটবেলা থেকে লাল দুর্গার পুজো দেখে আসছি। অন্য পুজোর মতো আলোর ঝলকানি এখানে নেই, শুধুমাত্র ভক্তির টানে হাজার মানুষ ভিড় জমান।’ একই বক্তব্য আরেক বাসিন্দা গৌতম রায়েরও।
ভেটাগুড়ির লাল দুর্গা শুধু একটি পুজো নয়, একটি ঐতিহ্যের ধারক। রাজআমলের রীতিনীতি আজও ভক্তদের মধ্যে অটুট বিশ্বাস জাগিয়ে রাখে। স্থানীয় মানুষ, দেউরি