কসবা ল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস সরকারের।
কসবা এলাকার সাউথ কলকাতা ল কলেজে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের অভিযোগে উত্তাল রাজ্য। এবার ছাত্রীর মেডিক্যাল পরীক্ষাতেই উঠে এল সেই ভয়াবহ ঘটনার প্রমাণ— ছাত্রীর শরীরে পাওয়া গিয়েছে জোর করে যৌনসম্পর্কের চিহ্ন, কামড়ের দাগ এবং নখের আঁচড়।
আরও পড়ুন: আমন্ত্রণ পেল না বিরোধীরা; উত্তর-পূর্বের সবচেয়ে বড় রথে শুধুই ঘাসফুল
ঘটনাটি ঘটেছে ২৫ জুন, কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই। নির্যাতিতার অভিযোগ, কলেজের এক প্রাক্তনী ও দুই সিনিয়র ছাত্র তাঁকে ঘরে আটকে রেখে একে একে ধর্ষণ করে। ঘটনার পরদিনই মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২৪ বছর বয়সি ওই ছাত্রীকে বৃহস্পতিবার পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, “মেডিক্যাল পরীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে জোর করে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের প্রমাণ, কামড়ের দাগ এবং নখের আঁচড়। যা নির্যাতিতার অভিযোগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত মনোজিৎ, যিনি একজন ক্রিমিনাল লইয়ার তিনি ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন, আর বাকি দুই অভিযুক্ত বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন।
রাজ্যের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি সৌরিন ঘোষাল বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে বলা যায়, কেউ ধর্ষণে সরাসরি অংশ না নিলেও যদি সহযোগিতা করে, তাহলেও সেটি গণধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয়। এই মামলায় বাকি দুই অভিযুক্ত ঘরে ঢোকেনি ঠিকই, কিন্তু বাইরে পাহারা দিয়ে অপরাধে সহায়তা করেছে। ফলে তারা একইভাবে দায়ী।”
আরও পড়ুন: অভিযুক্তের তৃণমূল যোগ ‘স্পষ্ট’! অনেকের বৃত্তেই দেখা গিয়েছে ‘এম’-কে
আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এই ঘটনায় ফের নড়েচড়ে বসেছে রাজনৈতিক মহল। বিরোধী এবং তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়েছে দোষারোপের পালা। মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়েও বিতর্ক তুঙ্গে।
এদিকে, রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্ত জোরকদমে চলছে। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।” তিনি আরও আশ্বাস দেন, “এই ঘটনায় দোষীদের কোনওভাবে ছাড়া হবে না। আইন অনুযায়ী কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।”
আপাতত তিন অভিযুক্ত বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। কসবা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার পুনর্গঠন এবং ডিজিটাল প্রমাণ যাচাই করাও চলছে।