সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
চারপুরুষের ঐতিহ্য বহন করে রাসচক্র গড়ছেন মুসলিম পরিবারের উত্তরসূরি। রাসচক্র ঘোরানোর রীতি এখনও কোচবিহার রাসমেলার প্রাণ। সেই ঐতিহ্যকে ঘিরে প্রতিবছর শহরজুড়ে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। প্রাণকেন্দ্রে বরাবরই থাকতেন আলতাব মিঁয়া। এবার তিনি নেই। রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর সন্তান আমিনুল হোসেন।
আরও পড়ুনঃ শুক্লা চতুর্দশীতে বজ্র যোগ-রেবতী নক্ষত্র, বজরংবলীর কৃপা পাবেন এই ৪ রাশি
আগামী ৫ নভেম্বর রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে উত্তরবঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী কোচবিহার রাসমেলা শুরু হচ্ছে। প্রতি বছর এই মেলাকে ঘিরে জনসমুদ্রের আকার নেয় রাজবাড়ি সংলগ্ন রাসমেলা ময়দান। শুধু কোচবিহারের মানুষ নন, অসম- বিহার-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও লাখো দর্শনার্থী আসেন এই ঐতিহ্যকে কাছ থেকে দেখতে। এই রাসমেলার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য হল রাসচক্র ঘোরানো, যা কোচবিহারের রাজপরিবারের আমল থেকে আজও একই নিয়মে পালিত হয়ে আসছে। এই রাসচক্র তৈরি করেন এলাকারই একটি মুসলিম পরিবার। প্রায় চার পুরুষ ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা। প্রথা রক্ষায় দায়িত্ব এবার বর্তেছে আমিনুল হোসেনের উপর। তিনি জানান, গত দু-বছর অসুস্থ বাবা পাশে ছিলেন। এবার তিনি একা। নিয়ম মেনে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন থেকে শুরু করেছেন। একমাসে শেষ করবেন কাজ। তারপর তুলে দেবে মদনমোহন বাড়ির কর্তৃপক্ষের হাতে।
আমিনুল বলেন, “এই একমাস ধরে সম্পূর্ণ হিন্দু নিয়ম মেনে, নিরামিষ খাবার খেয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে তৈরি করেছি এই ঐতিহ্যবাহী রাসচক্র। আর সামান্য কাজ বাকি। এরপর তা দিয়ে আসব মদনমোহন বাড়িতে। ছোট থেকে বাবাকেও এমন নিষ্ঠা ভরে রাসচক্র তৈরি করতে দেখেছি। তাই নিয়ম পালনে কোনও ত্রুটি রাখিনি।”
আরও পড়ুনঃ নেপালের উদাহরণ টেনে সতর্ক করল সুপ্রিম কোর্ট! প*র্ন দেখা বন্ধের দাবিতে নতুন বিতর্কে সরগরম দেশ!
তবে এ বার সুদে টাকা ধার করে রাসচক্র তৈরি করতে হয়েছে তাঁকে। কারণ তাঁর বাবা ট্রাস্টের কর্মচারি হলেও, তিনি এখনও সেই চাকরি জোগাড় করতে পারেননি। আমিনুল বলেন, “এই রাসচক্র তৈরি করে ১৩ হাজার টাকা পাই। তারমধ্যে ৯ হাজার টাকার সামগ্রী কিনতে হয় রাসচক্র তৈরি করতে। হাতে তেমন আর কিছুই থাকে না। এমনকী সবাইকে নিয়ে মেলায় গিয়ে আনন্দ করার সংস্থানটুকুও থাকে না। কিন্তু ট্রাস্টকে একটা চাকরির জন্য বারবার বলেও লাভ কিছু হয়নি।”
তবুও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাঁর কথায়, “এই কাজ শুধু পেশা নয়, আমাদের পরিবারের আবেগ ও গর্ব। তাই অন্য আর কিছু ভাবেন না। শুধু তাঁর আর্থিক প্রতিবন্ধকতাটুকু যদি একটু কাটিয়ে ওঠা যায়, সেটাই একমাত্র চিন্তা তাঁর।


                                    


