Thursday, 17 July, 2025
17 July, 25
Homeউত্তরবঙ্গMaldah: থাকবে না কোনও 'ব্যাকবেঞ্চার'! ইউ-আকারে বসার ধরনে বদল আনল মালদহের স্কুল

Maldah: থাকবে না কোনও ‘ব্যাকবেঞ্চার’! ইউ-আকারে বসার ধরনে বদল আনল মালদহের স্কুল

তিন রাজ্যের পথ অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গের মালদহেও চালু হয়েছে ‘নো মোর ব্যাক বেঞ্চার’ মডেল।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

কুশল দাসগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ

‘লাস্ট বেঞ্চে যারা বসো, তারা সামনে চলে এসো!’ অথবা, ‘অ্যাই, তুমি পিছনের বেঞ্চে চলে যাও!’ — এই দুই বাক্য বহু প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের জীবনেই যেন নিত্যদিনের চেনা আওয়াজ হয়ে থেকে গেছে। কিন্তু সময় বদলাচ্ছে। ফিকে হচ্ছে বৈষম্য। তাই এখন আর ক্লাসরুমে এমন বসার ব্যবস্থাই থাকছে না, যেখানে আলাদা করে ফারাক তৈরি করবে বসার বেঞ্চ। ‘লাস্ট বেঞ্চ’ বা ‘পিছনের বেঞ্চ’ বলে কিছু আর থাকবে না। তাই একটা ক্লাসে কেউই ‘ব্যাকবেঞ্চার’ বা ‘লাস্টবেঞ্চার’ হিসেবে চিহ্নিত হবে না!

কেরল, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাবে এমনটা আগেই হয়েছে। এবার সেই তিন রাজ্যের পথ অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গের মালদহেও চালু হয়েছে ‘নো মোর ব্যাক বেঞ্চার’ মডেল। জেলার শতাব্দীপ্রাচীন বার্লো গার্লস হাই স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে একটি শ্রেণিকক্ষ সাজানো হয়েছে ইউ-আকৃতিতে।

আরও পড়ুনঃ বদল হল পোস্টার! মিছিলের ঠিক আগেই নতুন বিতর্ক

তবে শিক্ষামূলক পরিবেশে এই একাধিক রাজ্যের নবচিন্তন শুরু হয়েছিল এক মালায়ালম চলচ্চিত্র ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’-এর অনুপ্রেরণায়। ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ ছবির একটি দৃশ্যে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র ‘ব্যাক বেঞ্চ’-এর সমস্যা তুলে ধরে ইউ আকৃতির বসার প্রস্তাব দেয়, যাতে সবাই শিক্ষকের নজরে থাকে এবং কারও পড়াশোনার ক্ষতি না হয়। এই দৃশ্য থেকেই শুরু হয় এক নতুন ভাবনা।

কেরলের কোট্টারাক্কারার রামবিলাসম স্কুল, তামিলনাড়ুর ‘পা’ আকৃতির বসার উদ্যোগ এবং পাঞ্জাবের কয়েকটি স্কুল ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থা চালু করেছে। এবার বাংলার মালদহেও সেই পথেই এগোচ্ছে বার্লো গার্লস হাই স্কুল।

মালদহের ইংলিশবাজারে অবস্থিত বার্লো গার্লস হাই স্কুলে প্রায় ১৯০০ ছাত্রী পড়ে। শনিবার সপ্তম শ্রেণির একটি শ্রেণিকক্ষে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় ইউ আকৃতির বসার ব্যবস্থা। উপস্থিত ছিলেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বাণীব্রত দাস। তিনি বলেন, ‘ফার্স্ট বেঞ্চার ও লাস্ট বেঞ্চার— এই চিরকালীন বিভাজনের অবসান ঘটাতে চাইছি আমরা। এখন যে কনফিগারেশনে বসানো হচ্ছে, তাতে সকলেই শিক্ষকের সামনে থাকবে। কেউ পিছিয়ে থাকবে না।’

আরও পড়ুনঃ ১৪ তলায় হুলস্থুল! মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপশ্রী মজুমদার জানান, ‘ব্যাক বেঞ্চার বলতে অনেকের মনে পড়ে যায় অলস, অনাগ্রহী ছাত্রছাত্রীর ছবি। কিন্তু এই নতুন সাজানোতে পিছনের আসন বলে কিছুই থাকবে না। সবাই সামনে, সবাই শিক্ষকের চোখে দৃশ্যমান। এই ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ ও অংশগ্রহণ বাড়াবে।’

দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা জীবনে এমন পরিবর্তন দেখে অভিভূত সব শিক্ষকই। যেমন কেরলের রামবিলাসম স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেছেন, ‘বাচ্চারা আগের চেয়ে বেশি চোখে চোখ রাখছে, বেশি প্রশ্ন করছে। আগে যারা চুপচাপ থাকত, তারাও এখন কথা বলছে।’

বার্লো গার্লস স্কুলের এক অভিভাবক ময়ূক সরকার বলেন, ‘পিছনের বেঞ্চে বসলে অনেক সময় শিক্ষকের নজর কম পড়ে। নতুন এই ব্যবস্থা সব ছাত্রীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।’

শুধু শিক্ষক বা অভিভাবকরা নন, এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা বেড়েছে সরকারি স্তরেও। তামিলনাড়ু সরকারের এক শিক্ষা আধিকারিক বলেন, ‘এই ধরনের শ্রেণিকক্ষের জন্য আলাদা পরিকাঠামোর দরকার পড়ে না। শুধু ভাবনার বদলই যথেষ্ট।’

একই সুর শোনা গিয়েছে পাঞ্জাবেও। সেখানে একটি স্কুলে ওই সিনেমাটি দেখানোর পরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেরাই ক্লাসরুমের সজ্জা বদলে দেন। এই উদ্যোগকে কেউ বলছেন যুগান্তকারী, কেউ দেখছেন মজার ছলে। প্রাক্তন সিবিআই আধিকারিক ভিভি লক্ষ্মী নারায়ণ এক্সে লেখেন, ‘একটি সরল পরিবর্তন কীভাবে সাম্য ও আত্মবিশ্বাসে এত প্রভাব ফেলে, তার বড় উদাহরণ।’

এই নিয়ে শিল্পপতি হর্ষ গোয়েঙ্কা রসিকতা করে লেখেন, ‘ভালই হয়েছে আমি কেরলে পড়িনি! আমার সামোসা, আঁকাবাঁকা নোট আর টিফিনের ঘুম কোথায় যেত!’

সব মিলিয়ে, ক্লাসরুম এখন আর সামনের ও পিছনের ভাগে বিভক্ত নয়। ইউ আকৃতির বসার ধরন শুধু আসনের রদবদল নয়, এটি এক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। শিক্ষার ক্ষেত্রে এ যেন নতুন এক ইনক্লুসিভ যুগের সূচনা, যেখানে সবাই শিক্ষকের চোখের সামনে থাকবে, সবাই আলোচনার অংশ হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কেউই পিছিয়ে থাকবে না।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন