Wednesday, 30 April, 2025
30 April, 2025
Homeউত্তরবঙ্গSiliguri: খেরোর খাতা এখন শুধুই নস্টালজিয়া

Siliguri: খেরোর খাতা এখন শুধুই নস্টালজিয়া

মোগল সম্রাট আকবরের আমলে পয়লা বৈশাখের উদযাপন শুরু। আর সেই সময় থেকেই দোকানে দোকানে ব্যবসার হিসেব রাখার জন্য হালখাতার প্রথা শুরু হয়।

কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:

হাল শব্দের একটা অর্থ নতুন। আর হালখাতা মানে নতুন খাতা।

ইতিহাস বলছে, মোগল সম্রাট আকবরের আমলে পয়লা বৈশাখের উদযাপন শুরু। আর সেই সময় থেকেই দোকানে দোকানে ব্যবসার হিসেব রাখার জন্য হালখাতার প্রথা শুরু হয়। নতুন বছরে নতুন জামা, মিষ্টিমুখ, লক্ষ্মী-গণেশের পুজোর পাশাপাশি দোকানে দোকানে হালখাতার চল ছিল দীর্ঘদিন। হ্যাঁ ছিল। এখন এই চল প্রায় উঠে গিয়েছে বললেই চলে। আর কয়েক বছরের মধ্যেই প্রযুক্তির সৌজন্যে খেরোর খাতার ঠাঁই হবে মিউজিয়ামে, এমনটা বলা অত্যুক্তি হবে না বোধহয়।

আরও পড়ুন: খেলা ঘিরে তেতে উঠল গয়েশপুর; ফুটবলারদের মারধরের নালিশ তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে

কয়েকদিন বাদেই বাংলা নববর্ষ। প্রতি বছর নববর্ষের আগে দোকানে দোকানে ব্যস্ততা লক্ষ করা যেত। লাল শালুতে মোড়া হিসেবের খাতাগুলো আজও স্মৃতিতে অমলিন। কিন্তু গত কয়েক বছরে খেরোর খাতা বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। খেরোর খাতাগুলো এখন যেন শুধুই নস্টালজিয়া।

শিলিগুড়ির দোকানগুলোতে এবারেও খেরোর খাতা মিলছে। চলার পথে বহু মানুষ এসে খাতা হাতে তুলে নেড়েচেড়ে দেখছেনও। কেউ কেউ দাম জিজ্ঞেস করছেন বটে, কিন্তু কিনছেন হাতেগোনা কয়েকজনই। অথচ একসময় শিলিগুড়িজুড়ে খাতা বিক্রির ধুম লেগে যেত। রাস্তার ওপর, দোকানে পসরা সাজিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা। নিমেষেই বিক্রি হয়ে যেত খাতা। তবে এখন শুধুই শূন্যতা।

পরিস্থিতি এবার এমনই, ৪০ টাকার খাতা ৩০ টাকায় বিক্রি করতে রাজি মহম্মদ মুন্না। কিন্তু কিনতেই চাইছেন না কেউ। রবিবার মহাবীরস্থানে দোকানে বসে এমনই দুঃখের গল্প শোনাচ্ছিলেন মুন্না। বলছিলেন, ‘প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণেই এই আজ অবস্থা। ২০০২ সাল থেকে আমি এই ব্যবসায় রয়েছি। গত চার-পাঁচ বছর ধরে পরিবর্তনটা যেন বেশিই চোখে পড়ছে। শুধুমাত্র পুরোনো রীতি ধরে রাখতেই দোকানে খাতা রাখি এখন।’

আরও পড়ুন: ডায়মন্ড হারবারে ছাপ্পা ভোট? অভিষেকের বিরুদ্ধে মামলায় বড় নির্দেশ দিয়ে দিল হাইকোর্ট

ঘোগোমালির ব্যবসায়ী সুজয় দাসও প্রযুক্তির দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর কথা, ‘কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইলে সব হিসেব রাখা সম্ভব। একটা খাতা রাখা অনেকেই বাড়তি ঝামেলা মনে করেন। যদিও সবাই এক নন। এখনও বিক্রি হয়। তবে সেটা শুধু নিয়মরক্ষার জন্য।’

মহাবীরস্থানে এক দোকান থেকে নতুন খাতা হাতে তুলে নিয়ে দেখে দাম জিজ্ঞেস করে আবার যথাস্থানে রেখে চলে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। কিনবেন না? প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, ‘এখন আর প্রয়োজন হয় না। আমি যাচ্ছিলাম রাস্তা দিয়ে, তাই একবার দেখে গেলাম।’

শহরের বাসিন্দা শংকর পাল অবশ্য মনে করেন, ‘ধীরে ধীরে অনেক রীতিই পালটে যাচ্ছে। এটাও তার মধ্যে একটা। এভাবেই ভেবে নিতে হবে। আর কয়েকবছর পর হয়তো নববর্ষের আগে খাতা বিক্রি হতেই দেখা যাবে না।’ প্রযুক্তি সবসময়ই কিছু দেয়, আবার কেড়েও নেয়। খেরোর খাতা ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে প্রযুক্তি। এর জন্যে হাপিত্যেশ করছেন কি কেউ? প্রশ্ন হয়েই থাক বরং।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন