“বিসর্জন“
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
নায়েবমশায় চলে যাওয়ার পর অনিল দলিলখানা নিয়ে পড়বে এমনসময় এক চেনা পুরুষের কন্ঠস্বর অনিলের কানে পৌঁছায়। “ছোটবাবু বাড়ী এলেন?” অনিল চেয়ে দেখে হুকো মহন্ত।
একগাল হেসে একটা প্রণাম করে অনিলের পায়ের কাছে বসে যায়।
“তা বলি কেমন আছেন ছোটবাবু?”
হুকো মহন্তকে কোনদিন অনিল সহ্য করতে পারেনি, তাই তার কথায় কোন উত্তর না দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে।
“ওঃ বুঝেছি, আপনি খুব ব্যস্ত আছেন। না হয় একটু পরেই আসব।” এবার আস্তে আস্তে অনিলের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে, “আপনার সাথে গোপন কথা আছে পরে বলব।”
“কি কথা?” এবার অনিল জিজ্ঞেস করে।
“এখন বলব।”
“হাঁ এখনই বলুন।”
“তাহলে বলি, ও পাড়ার ফটিক বাড়ুজ্জ্যে আপনার শ্বশুরকুলের একমাত্র সম্বল ভিটেটাও হাতিয়ে নিয়েছে। আমি বারণ করতে যাওয়ায় আমাকে কিনা……..”
“মহন্তবাবু, আপনি এখন যেতে পারেন। আর কখনও যদি এখানে দেখি তবে আমি জিব কেটে নেব।” রাগে ধমক দিয়ে অনিল হুকো মহন্তকে বলে।
ভয়ে আর হুকো মহন্ত আর কথা বলতে না পেরে রাগে গসগস করতে করতে সেইখান থেকে বেরিয়ে চলে যায়।
“অনিল”, কৃষ্ণাদেবী তাদের কথাগুলো শুয়ে থাকাকালীন কিছুটা শুনলেও অনিলের শেষ কথাটা শুনে অনিলকে বারণ করার সুরে হালকা ধমক দেয়।
“কি মা।” বলে অনিল মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
“ওরকমভাবে মহন্তবাবুকে বলতে নেই। যতই হোক ও এই গ্রামের লোক।” কথাটা বলে কৃষ্ণাদেবী বেশ হাঁফিয়ে যায়। তারপর আবার বলে, “তোমার বাবা ওর জন্য…..”
মায়ের অসমাপ্ত কথা অনিল’ই সমাপ্ত করে দিয়ে বলে, “ওর জন্য করে গেছেন। ওর নামে দশবিঘা জমি দান করে গেছেন। বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে গ্রামের এইসব সন্তানের দল হাজার হাজার টাকা উদরসাৎ করেছেন। এসব আমি আমার সহ্য করব না।” অন্তর থেকে কথাগুলো বেরিয়ে এসে কৃষ্ণাদেবীর কথাগুলোকে আর পুনরাবৃত্তি করতে দেয়নি। পরক্ষণে নিজেকে সংশোধন করতে পেরে মাথা নীচু করে মায়ের কাছ থেকে অনত্র চলে যায়। শিউলীর নজরে পরতেই কৃষ্ণাদেবীর কাছে এসে বলে, “মা, ওর কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না। ও রেগে গেলে রাগের মাথায় বলে ফেলে। পরে আফসোস করে।”
“হাঁ মা জানি, আমার সন্তানকে আমি খুব ভালো করেই চিনি।” এই বলে একবার স্বামীর ফোটোর দিকে তাকায় কৃষ্ণাদেবী।
“আর কতদিন বাঁচব বৌমা?”
“কেন মা, অমন কথা কেন মুখে নিয়ে আসেন।”
“এমনি, আমার শেষ সময় তো ঘনিয়ে এসেছে তাই বললাম। ”
“অমন কথা ভুল করে মুখেও আনবেন না মা।” মুখে কাপড় দিয়ে শিউলী কাঁদতে থাকে।