বাংলার অধিকাংশ শব্দের বানান ধ্বনিসঙ্গত নয়। আমরা বলি এক আর লিখি আর এক। বাংলা শব্দতত্ত্ব ও বাংলাভাষা পরিচয় গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা শব্দের বানান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যদিও বর্তমান সরকার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বানান ভুল লিখলেও নম্বর কাটে না।
‘১১ সালের আগেও মাধ্যমিকের খাতা দেখায় বানান ভুলে নম্বর খুব একটা কাটা হত না। বাম জমানার সেই নির্দেশিকায় লেখা থাকত, বাংলা খাতায় চারটি বানান ভুল হলে এক নম্বর কাটা হবে। কিন্তু বীরভূমের আইসিকে গালমন্দ করার পর অনুব্রত মণ্ডল যে ক্ষমা চিঠিটি লিখেছেন, তাতে কত নম্বর কাটা যাবে সেটাই ভাববার ব্যাপার।
আরও পড়ুন: ক্ষমা চাইলেন অনুব্রত! গালিগালাজের অডিয়ো ফাঁস হল কী করে? তুললেন সে প্রশ্নও
পুলিশ আধিকারিককে ফোনে হুমকি ও গালিগালাজের অডিও ফাঁস হতেই একপ্রকার চাপের মুখে পড়ে পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বীরভূমের ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ তৃণমূল নেতা। লিখেছেন “পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মন্ত্রী মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের সাধারণ কর্মী থেকে একজন বড় অফিসার সবাই দিদির কাছের মানুষ তাদেরকে অপমান করার কথা ভাবতে পারিনা। সাম্প্রতিক ঘটিনায় আমি দুঃখিত। দিদির পুলিশের কাছে একবার কেন ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি। আসলে আমি নানা রকম ওষুধ খায় দিদির পুলিশে বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ করলে মাথা গরম হয়ে যায়। সত্যি আমি দুক্ষিত। কিন্তু আপনাদের ভাবতে হবে তিনটে মহুকুমা বোলপুর সিউড়ি রামপুরহাটে বিশাল মানুষের মহামিছিল দেখে কারা ভয় পেল? বিজেপি কিকরে, আমার আর আমাদের বোলপুরের আই সি সাথে গাল মন্দর ফুটেজ পেল? কে দিল? কোন চক্রান্ত নেই তো?”
অনুব্রত আরও লেখেন, “তবুও আমি বলছি কোন পুলিশ বন্ধু আমাকে ভুল বুঝলে আমি দুক্ষিত (দুঃখিত) ও ক্ষমাপ্রার্থী।” চিঠির নীচে কেষ্টর হস্তাক্ষর ও তারিখ। পুলিশমন্ত্রীকে পাঠানো এই চিঠির ছবি প্রকাশ্যে আসতেই ‘বানান পুলিশদের’ ছিছিক্কার। তার কারণ, চিঠির আদ্যোপান্ত ভুলে ভরা।
ব্যাকরণগত বিধি বাদ দিলেও সাধারণ বানানের যা ছিরি, তাতে নম্বর কমে লাল কালি পড়া কেউ আটকাতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: ‘সরকারি’ উদ্যোগেই অভিনব জামাইষ্ঠী! সৈকতে বসিয়ে খাওয়ান জামাইকে
যেমন ওই চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, দাড়ি, কমার কোনও বালাই তো নেই-ই, বরং ‘মহুকুমা’ থেকে শুরু করে ‘দুক্ষিত’ বানান দেখে পাঠকরা সত্যিই দুঃখ পাবেন। যদিও শেষের দিকে কেউ বানানের উপর পেন দিয়ে কাঁচি চালিয়ে সঠিক বানানটি বাতলে দিয়েছেন, তবু তাঁরও চোখ এড়িয়ে গেছে বাদবাকি শব্দবন্ধ।
ভাষাবিদরা অনেক সময়ই লেখেন, বলেন যে, বাংলা বানানের স্বল্প কয়েকটি নিয়ম আছে। ছোট বয়সে তা না জানলেও চলে। ছেলেমেয়েরা ণত্ব,ষত্ব শেখে একটু বড় হয়ে। কিন্তু পড়তে পড়তে তাদের চিনে নিতে হয় শব্দকে। কিন্তু সমস্যা হল, নিয়মিত না পড়লে, না পড়া শুনলে, না মনের ভাব স্পষ্ট করে বলার সুযোগ পেলে শব্দের সঙ্গে ভাব হবে কী করে! এখন প্রশ্ন এটাই যে, চিঠি দিয়ে ‘বীরভূমের বাঘ’ তাঁর মনের ভাষা কতটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।