এক সুন্দর ভ্রমণ কাহিন
“বাঁকুড়ার রাণী – মুকুটমনিপুর“
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ হল “কংসাবতী বাঁধ” বা “মুকুটমনিপুর ড্যাম বা মুকুটমনিপুর বাঁধ “, যা বাঁকুড়া জেলার খাতড়া মহকুমায় অবস্থিত। এই বাঁধটি কংসাবতী নদী ( কাঁসাই ও কুমারী নদীর মিলনে উৎপন্ন) এর প্রবাহিত জলকে আটকানোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। এই নদীর উৎপত্তিস্থল পশ্চিমবঙ্গের ছোটনাগপুর মালভূমি। এটি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
এই বাঁধটি নির্মিত হয়েছিল তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় -এর সময়ে। বাঁধটি দৈর্ঘ্য 11,270 মিটার (36, 980 ফুট) এবং প্রস্থ 38 মিটার (125 ফুট)। বাঁধটির 1.04 কিউবিক কিলোমিটার স্থূল সঞ্চয় করার ক্ষমতা রয়েছে এবং এটি পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র বাঁধ যা ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় জল কমিশন দ্বারা “জাতীয় গুরুত্বের বাঁধ” হিসাবে মনোনীত হয়েছে।
মুকুটমনিপুর পশ্চিমবঙ্গের একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র যা পর্যটকদের জন্য এক মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, জলাধারে বিনোদনমূলক কার্যকলাপ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকর্ষণমূলক স্থান। এইকারণে মুকুটমনিপুরকে “বাঁকুড়ার রাণী” বলা হয়।
আরও পড়ুন: Puri: আধ ঘণ্টা ধরে চক্কর রহস্যময় ড্রোনের, তার পর উধাও!
বাঁধের উপর নির্মিত রাস্তাটির দৈর্ঘ্য 11 কিলোমিটার বা 6.8 মাইল। এই রাস্তার মাঝপথে পড়ছে পরেশনাথের পাহাড়, যেখানে সদায় বিদ্যমান ভগবান পরেশনাথের জৈনমূর্তি, শিবলিঙ্গ, যা সর্বদা পূজিত হন। এই পাহাড়ের তলদেশেও পরেশনাথের জৈনমূর্তিও রহেছে। পরেশনাথের মন্দির দর্শন করার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। প্রকৃত পরেশনাথের মন্দির নদীর জলে আছে যা নদীর জল কমে গেলে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে যায় প্রকৃত মন্দির দর্শনের জন্য।
মুকুটমনিপুর এলেই পর্যটকদের দেখার জন্য আকর্ষণীয় স্থান হল মুসাফিরানা ভিউপয়েন্ট। এখানে ছুটির অবসর সময় কাটানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী তাদের সন্তানদের সাথে এবং বন্ধু- বান্ধব একসাথে এসে সময় কাটান। এই ভিউপয়েন্ট থেকে পর্যটকেরা তাদের ক্যামেরায় অস্তগামী সূর্যের আলো নদীর নীল জলের উপর পড়লে মুক্তার মতো ঝকমক করে জ্বলে উঠার দৃশ্য বন্দী করে রাখেন।
মুকুটমনিপুর ভ্রমণ করতে এসে পর্যটকদের দল নৌকো বিহার করে দুই নদীর মিলনস্থল (কাঁসাই ও কুমারী নদীর) দর্শন করেন, আবার তারাই নৌকো বিহার করে 7.7 কিলোমিটার দূরে বনপুকুরিয়ার হরিণপার্কে গিয়ে হরিণ দর্শন করে আনন্দ উপলব্ধি করেন।
মুকুটমনিপুরের ড্যাম থেকে পিয়ারলেস রিসর্টের রাস্তা ধরে বড়ঘুটু পেরিয়ে নোয়াডিহিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বারা নির্মিত হয়েছে এক সুন্দর আবাসন। সেইখান থেকে অস্তগামী সূর্যের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।
আরও পড়ুন: Haryana Earthquake: ভোরে কাঁপল হরিয়ানা, ১২ দিনে তিন বার
মুকুটমনিপুরে পর্যটকদের দল ভ্রমণ করতে আসলেই মা অম্বিকা দেবীর দর্শন না করে কেউ ফিরে যায় না। ইনি একজন জাগ্রত দেবী। মা অম্বিকা দেবীর মন্দিরের পিছনে এক রাতের মধ্যে তৈরী করা অসমাপ্ত পাথরের জৈন মন্দির রয়েছে। মা অম্বিকা দেবীর নাম অনুসারে এই স্থানের নামকরণ হয় অম্বিকানগর। অম্বিকানগরে মা দেবী অম্বিকার মন্দির ছাড়াও রয়েছে পূর্ব পরিচিত এক ভগ্ন প্রাপ্ত রাজবাড়ী। যেখানে আজও দুর্গাপূজা বংশ পরম্পরা চলে আসছে।