সৌরভ দত্ত , কলকাতা :
কত ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছেন মনমোহন সিং। শান্ত স্বভাবের হয়েও বিতর্কেরও সঙ্গী থেকেছেন। তাঁর নিজের গায়ে কেউ কালি ছেঁটাতে পারেনি বটে, তবে ‘মৌন প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে কটাক্ষও সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এহেন মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য শনিবার সম্পন্ন হল দিল্লিতে। শনিবার তাঁর স্মৃতিসৌধ নিয়ে বিতর্কের আবহেই কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে নিগমবোধ ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয় মনমোহন সিংয়েহ দেহ। সেনার ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শনিবার তাঁর শেষকৃ্ত্য সম্পন্ন হয়। সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরা। এছাড়াও সেখানে ছিলেন মনমোহনের পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের স্মৃতিসৌধের জন্য জায়গা চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি লিখেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কংগ্রেসের দাবি ছিল, এমন এক স্থানে মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হোক যেখানে তাঁর সম্মানে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা যাবে। এই নিয়ে ‘রাজনীতি করার’ অভিযোগও ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কংগ্রেস এবং মনমোহন সিংয়ের দাবি মেনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিসৌধের জন্যে জমি দেওয়া হবে। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে পিআইবি-র মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে শিরোমণি অকালি দলের নেতা সুখবীর সিংহ বাদল সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দাবি করেন, মনমোহন সিংহের স্মৃতিসৌধের জন্য জায়গা চেয়েছিল কংগ্রেস এবং তাঁর পরিবার। সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্রীয় সরকার।
আরও পড়ুন: Mamta Banerjee: নতুন বছর থেকেই কড়াকড়ি! এবার রাজ্যের মন্ত্রীদের বিরাট নির্দেশ মমতার
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের জন্যে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করতে জমি বরাদ্দের আবেদন জানিয়ে ২৭ ডিসেম্বর সকালে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি। সকালে বিশেষ ক্যাবিনেট বৈঠকের পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কংগ্রেস সভাপতি এবং পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে স্মৃতিসৌধের জন্যে জমি দেওয়া হবে। এর মাঝে শেষকৃত্য এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতে পারে। কারণ জমি বরাদ্দ করতে এবং স্মৃতিসৌধ তৈরির ক্ষেত্রে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে।’
সকালে ৯টা নাগাদ বাসভবন থেকে মনমোহন সিংয়ের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কংগ্রেস অফিসের উদ্দেশে। সেই সময়ে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে, সনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি।
কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয় থেকে শনিবার মনমোহন সিংয়ের শেষযাত্রা শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ মনমোহন সিংয়ের পুষ্পসজ্জিত মরদেহ মরদেহ শ্মশানে পৌঁছয়। মনমোহন সিংয়ের শেষযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতাকর্মী সহ-তাঁর অনুগামীরা।
গান স্যালুট-সহ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হল দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য। দিল্লির নিগামবোধ ঘাটে শেষকৃত্যের সময়ে হাজির ছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়,প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ প্রথম সারির কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং সেনাকর্তারা।
আগাগোড়া উপস্থিত গান্ধী পরিবারের সদস্যরা। শেষকৃত্যে কাঁধ দিলেন রাহুল গান্ধী। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়ে মাথায় রুমাল বেঁধে মনমোহনের দেহ কাঁধে তুলে নিতে দেখা যায় তাঁকে।
আরও পড়ুন: Potato: আলু চাষে কৃষকদের দেশি মদই ভরসা, এর উপকারিতা শুনলে হবেন অবাক
কংগ্রেস হেডকোয়ার্টার থেকে সুসজ্জিত গাড়িতে মনমোহন সিংয়ের মরদেহ শনিবার নিয়ে যাওয়া হয় নিগমবোধ ঘাটে। পৌনে ১২টা নাগাদ শুরু হয় শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া। তার আগে মনমোহন সিংকে শ্রদ্ধা জানাতে নিগমবোধ ঘাটে উপস্থিত হন ভূটানের রাজা জিগমে খেসর নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং মরিশাসের বিদেশমন্ত্রী মণীশ গোবিন।
পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হল দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। দিল্লির নিগমবোধ ঘাটে অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হল তাঁর। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্ত্রী, কন্যা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা।
নিগমবোধ ঘাটে ভিড় জমিয়েছেন শত শত মানুষও। সেখানে গান স্যালুটে বিদায় জানানো হয় মনমোহনকে। মনমোহনের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন দেশের তিন বাহিনীর প্রধানও।
মনমোহনের শেষকৃত্যের জন্য কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। শেষযাত্রায় মনমোহনকে দেখতে রাস্তায় ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই। স্লোগান ওঠে, ‘মনমোহন সিংহ অমর রহে’, ‘জব তক সূরজ-চাঁদ রহেগা, মনমোহন সিংহ ইয়াদ রহেগা।’নিগমবোধ ঘাটে যখন এসে পৌঁছয় মনমোহনের মরদেহ, সাদা ফুলের চাদরে মোড়া ছিল কফিন। এর পর একে একে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করেন সকলে। জাতীয় পতাকায় মোড়া হয় মনমোহনের মরদেহ।এর পর ২১টি গান স্যালুট দেওয়া হয়। আচারানুষ্ঠান মেনে সম্পন্ন হয় তাঁর অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া।