Wednesday, 18 June, 2025
18 June, 2025
Homeরাজ্যPoila Baisakh 2025: আজ বাঙালির পয়লা বৈশাখ; বাঙালির ছক্কা হাঁকানোর দিন, কাল...

Poila Baisakh 2025: আজ বাঙালির পয়লা বৈশাখ; বাঙালির ছক্কা হাঁকানোর দিন, কাল যা হবে দেখা যাবে

নাম কা ওয়াস্তে হবে হালখাতা। খাতা কোথায়! সে পাট তো কবে চুকে গিয়েছে। লক্ষ্মী-গণেশ দুই ভাইবোন বেতের চুবড়িতে লাল গামছা জড়িয়ে গদিঘরে আসন পাতবেন এদিন।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও, ক্ষমা করো আজিকার মতো, পুরাতন বরষের সাথে, পুরাতন অপরাধ যত…

আজ পয়লা বৈশাখ। বাঙালির একটি দিনের পার্বণ। আগামিকাল, বুধবার থেকে কাজে ব্যস্ত বাঙালি ভুলে যাবে ২ বৈশাখের কথা। কিন্তু, কত বঙ্গাব্দ? অনেকেই হেঁচকি তুলবেন এমন ক্যুইজের প্রশ্ন শুনে। ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। ব্যস, তারপর ফের মনে করার জন্য হাতে রইল ৩৬৫টি দিন। এদিন বাঙালির পেটপুজোয় কোনও খামতি যাবে না। রেস্তরাঁগুলি এখন থেকেই কোমর বেঁধে ভিয়েন বসিয়েছে। ব্যবসায়ীরা ভোররাত থেকে লাইন দিয়েছেন কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরসহ বিভিন্ন মন্দিরে। নাম কা ওয়াস্তে হবে হালখাতা। খাতা কোথায়! সে পাট তো কবে চুকে গিয়েছে। লক্ষ্মী-গণেশ দুই ভাইবোন বেতের চুবড়িতে লাল গামছা জড়িয়ে গদিঘরে আসন পাতবেন এদিন।

আরও পড়ুন: লকার থেকে বের করা গেল না বুড়া কালীমাতার সোনার মুখমণ্ডল, নববর্ষে মন খারাপ ভক্তদের

অষ্টাদশ শতকে ইয়ং বেঙ্গলের বাবু কালচারের যুগে পয়লা বৈশাখের দিন কলকাতার উঠতি জমিদারের দল মেতে উঠত মোচ্ছবে! ইংরেজদের খুশি করতে বসত বাইজি নাচের আসর, দেদার খানাপিনা, ছুটত মদের ফোয়ারা! অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি বাঙালি হিন্দু সমাজে নববর্ষ পালিত হত প্রবল ধর্মীয় ভাবাবেগের মধ্যে। আসলে সেই প্রাচীন সময় থেকেই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের যে ছবি ধরা পড়ে, দেখা যায়, একে ঘিরে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত বাঙালির উদ্দীপনা মাঙ্গলিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে।

বছরের প্রথম দিন সকাল সকাল স্নান সেরে নিতে হতো। স্নান করে উঠলেই জুটত যার যেমন সাধ্য তেমন নতুন পোশাক। জামা-কাপড় যদি নাই জোটে, নিদেনপক্ষে গেঞ্জি একটা কপালে লেখা থাকত। মা-বাবারাও কিছু না কিছু নতুন পোশাক পরতেন। পুজো দিতেন সন্তানের মঙ্গল কামনায়। সকালে নিয়মমাফিক একবার পড়তে বসতে হতো। তা সে যতটুকু সময়ের জন্যই হোক না কেন।

বাজারে সকাল থেকে ভিড় উপচে পড়ত। মাছ, মাংস ও মিষ্টির দোকানে লাইন পড়ে যেত। ওং, উদারায় নমঃ। এভাবেই একটা সময় রাতে আর কিছু না খেয়ে শুয়ে পড়ত বাঙালি। দোকান দোকান থেকে আনা প্যাকেট আর প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে দিয়ে যাওয়া কাঁসার রেকাবিতে মিষ্টি ও পায়েস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত কলকাতা।

আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেকে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদের মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। ক্রমশ এই পয়লা বৈশাখ সারা ভারত তথা বাঙলারও একটা ঐতিহ্যমণ্ডিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে পরিণত হল।

আরও পড়ুন: পয়লা বৈশাখে বিশাখা নক্ষত্র-সিদ্ধি যোগ, বছরের প্রথম দিন কার কেমন কাটবে?

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরপরিবারে মহাসমারোহে উদযাপিত হত পুণ্যাহ বা নববর্ষের অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, সেদিন যাকে বলে জমিদারি সেরেস্তার ‘পুণ্যাহ’, খাজনা আদায়ের প্রথম দিন। কাজটা নিতান্তই বিষয়-কাজ। কিন্তু জমিদারি মহলে সেটা হয়ে উঠেছে পার্বণ। সবাই খুশি। যে খাজনা দেয় সেও, আর যে খাজনা বাক্সেতে ভর্তি করে সেও। এর মধ্যে হিসেব মিলিয়ে দেখবার গন্ধ ছিল না। যে যা দিতে পারে, তাই দেয়। ১৮৯২ সালে সাজাদপুর থেকে একটি চিঠিতে রবি ঠাকুর লিখলেন, আজ আমাদের এখানে পুণ্যাহ– কাল রাত্তির থেকে বাজনা বাজছে।

উনিশ শতকের বাংলার সর্বাপেক্ষা আলোচিত পরিবার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। কাজেই সেই পরিবারের পয়লা বৈশাখ পালন ও রান্নাবান্না যে অন্য পরিবারের থেকে স্বতন্ত্র হবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। পয়লা বৈশাখের খাওয়াদাওয়া হত বাড়ির দোতলার টানা বারান্দায়। তেতলায় থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। টানা বারান্দায় মেঝেতে কার্পেটের আসন লম্বা করে বিছিয়ে তার সামনে কলাপাতা ঘিরে মাটির খুরিতে পরিবেশিত হত কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছ আর চালতা দিয়ে মুগের ডাল, নারকেল চিংড়ি, মাছের পোলাও, আম দিয়ে শোল মাছ সহ নানা সুস্বাদু খাবার।

নিত্যনতুন রান্না খেতে ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ—দইয়ের মালপো, পাকা আম দিয়ে তৈরি মিষ্টি, চিঁড়ের পুলি। মৃণালিনীর তৈরি নববর্ষের জনপ্রিয় মিষ্টি ‘এলোঝেলো’ কবির খেতে লাগত বেশ, কিন্তু নামটা তেমন পছন্দ না হওয়ায় বদলে তার নতুন নাম দিলেন ‘পরিবন্ধ’। একবার বৈশাখের উৎসবে মৃণালিনীকে দিয়ে মানকচুর জিলিপিও তৈরি করিয়েছিলেন।

রানী চন্দের ‘আলাপচারি রবীন্দ্রনাথ’ বই থেকে জানা যায়, ১৯৩৯ সালের পয়লা বৈশাখে বিশেষ পাঠ শিখিয়েছিলেন গুরুদেব। তিনি বলেছিলেন, ‘নববর্ষ-ধরতে গেলে রোজই তো লোকের নববর্ষ৷ কেননা, এই হচ্ছে মানুষের পর্বের একটা সীমারেখা৷ রোজই তো লোকের পর্ব নতুন করে শুরু হয়৷’ কবির শেষ জন্মদিন, অর্থাৎ ৮০-তম জন্মদিনও পালিত হয়েছিল পয়াল বৈশাখের দিন। সে বার কবিগুরু হুইল চেয়ারে বসেছিলেন উদয়ন গৃহে। তাঁর সামনেই ‘সভ্যতার সংকট’ পাঠ করেছিলেন ক্ষিতিমোহন সেন।

স্মৃতির অতলে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে বর্ষবরণ ঘিরে পুরনো অনেক কিছুই। নববর্ষের প্রাক্কালে চৈত্র সংক্রান্তির দিবাগত রাতে নতুন ঘটে জল ঢেলে তাতে আতপ চাল ভিজিয়ে রেখে কচিপাতাযুক্ত আমগাছের চিকন ডাল ভিজিয়ে রাখা হত। পরদিন সকালে বাড়ির সবাইকে সেই ভেজানো চাল খেতে দিয়ে, আমের ডাল জলে ভিজিয়ে সবার শরীরে ও ঘরের চারদিকে ছড়ানো হত সার্বিক মঙ্গলকামনায়। ছোট বড় সকলের কপালে দইয়ের ফোঁটা দিয়ে পুজোর জলখাবারে দেওয়া হত নুন আর আদাকুচি দিয়ে মাখা মুগডাল ভিজে, নুনলেবু দিয়ে মাখা শশা নারকোল, কাঁঠালি কলা, দই মিষ্টি ইত্যাদি। এখন সেইসব আচার-অনুষ্ঠানও ভুলতে বসেছে বাঙালি। নববর্ষে এসেছে রাজনীতির তিলক। কাদের নববর্ষ, কার নববর্ষ পয়লা বৈশাখ। কিন্তু, তাতে কী! বঙ্গদেশে নববর্ষ বলতে আজও ১ বৈশাখকেই বোঝায়। যুগ যুগ ধরে এই দিনটিই বাঙালির সম্বচ্ছকার দুঃখের ইনিংসের ওপেনার হিসেবে এই একটি বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে এসেছে বরাবর। এবারেও মনেপ্রাণে একটি বছরের লড়াইয়ের টনিক ঢেলে দিতে না হয় একটি দিনই চালিয়ে খেলে যাক পয়লা বৈশাখ। কাল যা হবে, দেখা যাবে…।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন