সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
স্কুল চলাকালীন এক ছাত্রীকে বকাঝকা করেছিলেন এক শিক্ষিকা। সেই ঘটনার জল গড়িয়েছে থানা পর্যন্ত। ছাত্রীর অভিভাবক আর সেই শিক্ষিকা, একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। শুধু থানা নয়, অভিযোগ পৌঁছে গিয়েছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা কমিশনার ও চাইল্ড কেয়ার পর্যন্ত। আর এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে সুনীতি অ্যাকাডেমির। কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ছে শিক্ষক এবং অভিভাবক মহলে।
দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বকা দেওয়ার ঘটনাটি গত ২১ অগাস্ট ঘটেছে। ক্লাসের মধ্যেই দশম শ্রেণির সেই ছাত্রীকে বকা দেন এক শিক্ষিকা। ওই শিক্ষিকার বক্তব্য, ছাত্রীটি ক্লাসে তাঁর কথা শুনছিল না। উলটে মুখে মুখে তর্ক ও বেয়াদপি করছিল। আর ওই ছাত্রীর অভিভাবকের দাবি, ওই শিক্ষিকা তাঁর মেয়েকে বকাঝকা করার সঙ্গে শিক্ষিকাদের কমন রুমে নিয়ে গিয়ে মারধরও করেছেন। সেই ঘটনার পর ওই ছাত্রীর অভিভাবককে স্কুলে ডাকা হয়েছিল। ঘটনার পর থেকে ওই ছাত্রী আর স্কুলে আসছে না।
আরও পড়ুনঃ ছাত্র সংগঠনের দাবি, সরকারের অনুরোধ, কিছুই কানে তোলেননি শান্তা দত্ত দে; মনে করালেন মীরা পাণ্ডেকে
শিক্ষিকার অভিযোগ, ঘটনার দিন রাত ১২টা নাগাদ ওই ছাত্রীর অভিভাবক ফোন করে তাঁকে নানারকমের হুমকি দেন এবং কটু কথা বলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে পরেরদিন ওই অভিভাবকের বিরুদ্ধে কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই শিক্ষিকা। একথা জানার পর ওই অভিভাবকও শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় পালটা অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে স্কুলে চাপানউতোর চলছে। কোতোয়ালি থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সুনীতি অ্যাকাডেমির টিচার ইনচার্জ মৌমিতা রায় কিছু বলতে চাননি। তবে সুনীতি অ্যাকাডেমির পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা জেলা শাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, ‘খবর পেয়েছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
সেই ছাত্রীর বাবা নিজেও পেশায় শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাসে বসে বন্ধুদের সঙ্গে একটু গল্প করছিল এবং মুচকি হাসছিল। সে সময় ক্লাসরুমে ওই শিক্ষিকা ঢুকে পড়েন। ক্লাসে হাসার অপরাধে ওই শিক্ষিকা তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ এবং বাবা-মায়ের নাম ধরেও উলটোপালটা বলেন। শিক্ষিকাদের কমনরুমে নিয়ে তাকে পিঠে মারেন। আমার মেয়ে একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এই ঘটনায় সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘গোটা ঘটনায় মেয়ের কোনওকিছু হলে পুরোপুরি দায়ী থাকবেন ওই শিক্ষিকা।’
আর সেই শিক্ষিকা কী বলছেন? তাঁর বক্তব্য, ‘সেদিন ক্লাসে বসে ওই ছাত্রী সহ তিনজন ছাত্রী হাসাহাসি করছিল। আমি ওদের তা করতে বারণ করি। বাকি দুজন চুপ করে গেলেও ওই মেয়েটি থামছিল না। উলটে মুখে মুখে তর্ক এবং বেয়াদপি করে যাচ্ছিল। শিক্ষিকাদের কমনরুমেও মেয়েটি নিজে নিজেই যায়। সেখানে গিয়েও তর্ক করা শুরু করে। থামানো যাচ্ছিল না। এরপর তাকে থামাতে হাত উঠিয়ে কেবল বলি, এক চড় মারব। পরে তার অভিভাবকদের ডাকা হয়। তাঁরা এসে স্কুল থেকে তাকে নিয়ে যান।’
ঘটনাটি নিয়ে সরব হয়েছেন সুনীতি অ্যাকাডেমির অ্যালামনাই অ্যাসোসিসেশনের সদস্যা রিয়া চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘স্কুলে কী ঘটেছে আমি জানি না। তবে সত্যিই যদি শিক্ষিকা ইচ্ছাকৃত কিছু করে থাকেন তাহলে সেটি লজ্জাজনক। দুই তরফের অভিযোগ নিয়েই তদন্ত হওয়া উচিত।’