কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুরিঃ
মালদহ জেলার বিখ্যাত মিষ্টি “রসকদম্ব” ।
কদম ফুলের মতো দেখতে এই মিষ্টির ভিতরে থাকে ছোট রসগোল্লা। তার উপরে থাকে ক্ষীরের মোটা প্রলেপ। সারা গায়ে জড়ানো থাকে পোস্ত মাখানো চিনি। এ মিষ্টির নাম ‘রসকদম্ব’। রসকদম্ব নাম বটে, তবে রসে টইটম্বুর নয়। এ মিষ্টির এত সুন্দর রূপ, দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে জাগে না। বরং চেয়ে থাকতে সাধ হয়। মুখের মধ্যে ক্ষীর গলে গিয়ে এক ধরনের নরম স্বাদ পাওয়া যাবে, সঙ্গে ক্ষীরের অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ।
আরও পড়ুনঃ বাগদায় সাংঘাতিক কাণ্ড! বউ জানত না স্বামী বাংলাদেশের বিএনপি নেতা
এ স্বাদ লিখে বোঝানো যায় না। কদমফুলের মতো দেখতে এ মিষ্টির ভেতর থাকে ছোট রসগোল্লা, বাইরে ক্ষীরের প্রলেপ আর চিনি কিংবা পোস্ত দানার আস্তরণ। ক্ষীরের স্বাদ মিইয়ে যেতেই মুখে পড়বে সেই রসগোল্লা, যেন কদমফুলের ভেতরের শাঁস।
শোনা যায়,সুলতান হুসেনশাহর আমলে যখন এই মালদার নাম ছিলো “গৌড়”, সেসময় এই “গৌড়” এ আসেন চৈতন্য মহাপ্রভু। “কেলিকদম্ব” বৃক্ষের নীচে তিনি দীক্ষা দেন “রূপ” (রূপ গোস্বামী) আর “সনাতন” (সনাতন গোস্বামী) কে। এই “কেলিকদম্ব” বৃক্ষের নামেই এই মিষ্টির নাম হয় “রসকদম্ব”। দেখতে অনেকটাই কদম্ব ফুলের মতো এবং মিষ্টরসে ভরপুর। পশ্চিমবঙ্গ “রসগোল্লার” উত্পত্তিস্থল স্বীকৃতি পাওয়ার পর, মালদা অঞ্চলের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা, “রসকদম্বের” উত্পত্তিস্থান হিসাবে মালদাকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি রেখেছেন।
মালদাতে বিয়েবাড়ি, গৃহপ্রবেশ, অন্নপ্রাশন বা এজাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে “রসকদম্ব” অনুপস্থিত, এরকম সচরাচর দেখা যায় না। মালদা জেলা ছাড়িয়েও রাজ্য, দেশ তথা বিদেশে যাচ্ছে এই “রসকদম্ব”।
আরও পড়ুনঃ ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা! অমিত সাহার পেটে ঢুকে গেল বাঁশ, জটিল অস্ত্রোপচার জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে
মালদায় একসময় বিখ্যাত ছিল হালুয়া পট্টি আর টাড়ার খাজা। দুটোই সুলতানি আমলের মিষ্টি। আর ছিল মনাক্কা। বেশ কয়েক বছর হল হালুয়া পট্টি আর খাজা পাওয়া যায় না। অনেকে বলেন, সুলতানি আমলের শেষের দিক থেকে বিলুপ্ত হতে শুরু করেছিল এগুলি। তবে, রসকদম্বের চাহিদা বাড়তে থাকে। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান হোক, অন্নপ্রাশন হোক, আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া হোক, বাজার সেরে বাড়ি ফেরা হোক – রসকদম্ব চাই-ই চাই। জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ – সব জায়গাতেই রসকদম্বের সুনাম। মালদায় এলে রসকদম্বের খোঁজ করবেন না এমন মানুষ দুর্লভ। ১৬০০ খৃষ্টাব্দে প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের শেষ সুলতান ছিলেন সুলেমান কুরবানি। সুলতানের বংশধররা রাজধানী গৌড়কে সরিয়ে নিয়ে যান টাড়ায়। সে সময় মিষ্টির কারিগররা যে খাজা তৈরি করতেন তার নাম ছিল টাড়ার খাজা। মালদা থেকে অনেক প্রাচীন মিষ্টি হারিয়ে গেছে কিন্তু রসকদম্বের চাহিদা বেড়েছে, শোনা যায় রসকদম্বের আজকের যে রূপ তা তৈরি হয়েছিল ১৮৬১ সালে। মালদার মেহেরপুরের কারিগররা নতুন রূপ দেন।
আর হবেই না বা কেন ? এই রসকদম্বের সাথেই তো জড়িয়ে আছে “শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু”র প্রেমরসেরই ধারা।