কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মূলেই রয়েছে অযোগ্যরা। কম নম্বরপ্রাপকদের বাড়তি নম্বর দেখিয়ে চাকরি দেওয়ায় পুরো প্যানেলই বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এবার ‘অযোগ্য’ অভিযোগ উঠল র্যাশনের ডিলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রেও। নির্দিষ্ট পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই ডিলারশিপ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও, একাধিক ক্ষেত্রে কম নম্বরপ্রাপকরা সুযোগ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। যথারীতি শাসকদলের প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে। যোগ্য ব্যক্তিদের পরিবর্তে অযোগ্যদের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে বলে মহকুমার চারটি ব্লকেই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তবে ফাঁসিদেওয়ার দুটি এলাকা থেকে প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগপত্র জমা পড়েছে খাদ্য দপ্তরে। শিক্ষক নিয়োগের রেশ টেনে অনেকেই আদালতে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, এক্ষেত্রেও লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে দার্জিলিংয়ের ডিস্ট্রিক্ট লেভেল ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম কমিটির (ডিএলএফপিডিএসসি) সদস্য দার্জিলিংয়ের অতিরিক্ত জেলা শাসক সুমিতকুমার রাইয়ের দাবি, ‘স্বচ্ছতার সঙ্গেই কাজ হয়েছে। র্যাশন ডিলারশিপ দেওয়া নিয়ে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’ দার্জিলিংয়ের খাদ্যনিয়ামক মানিক সরকারের সঙ্গে রবিবার রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ ‘কেউ কেশ স্পর্শ করতে পারবে না’, মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ‘আশ্বাস’ শমীক ভট্টাচার্যের
দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমাতেও গত জানুয়ারি মাসে র্যাশন ডিলারশিপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের প্রচুর মানুষ ডিলারশিপ পেতে আবেদন করেন। নিয়ম মেনে আবেদনকারীদের নিজস্ব এলাকায় পৌঁছে বিভিন্ন পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের আধিকারিকরা। দপ্তর সূত্রের খবর, মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষার ভিত্তিতে ডিলারশিপ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭৫ নম্বরই থাকে আবেদনকারীর র্যাশন দোকান, গুদামের আয়তন, মাটি থেকে উচ্চতা, গুদাম ছাদ দেওয়া নাকি টিনের চালা, আবেদনকারী তপশিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত কি না, বিধবা মহিলা, শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ কয়েকটি বিষয়ে। প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বাছাই করা চারজন আবেদনকারীকে ইন্টারভিউয়ের জন্য জেলা স্তরে থাকা তিন সদস্যের ডিএলএফপিডিএসসি-র কাছে ডাকা হয়। এই কমিটিতে খাদ্য দপ্তরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা শাসক, খাদ্যনিয়ামক এবং মহকুমা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক রয়েছেন। এই কমিটির হাতে ২৫ নম্বর দেওয়া রয়েছে। কমিটি মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নম্বর দেয়। এই নম্বরের সঙ্গে প্রার্থীর পরিকাঠামোগত নম্বর যোগ করে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপককে ডিলারশিপ দেওয়ার কথা।
অভিযোগ, মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে এই নিয়ম মানা হয়নি। খোদ ফাঁসিদেওয়ার দুটি জায়গা থেকে গ্রামবাসীদের সই সহ গণ অভিযোগপত্র খাদ্য দপ্তরে জমা পড়েছে। ফাঁসিদেওয়ার ছোটা হাপতিয়াগছ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত র্যাশন ডিলারশিপের জন্য চারজন পরীক্ষা দিয়েছেন। অভিযোগ সেখানে যিনি সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন, তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে ডিলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। এই খবর এলাকায় পৌঁছাতেই গ্রামের ৬৮ জন বাসিন্দার স্বাক্ষর করা অভিযোগপত্র খাদ্য দপ্তরে জমা পড়েছে। তাঁরা লিখেছেন, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট নেতা-নেত্রীকে ডিলারশিপ দিলে এলাকার মানুষ সুষ্ঠুভাবে র্যাশনের বরাদ্দ পাবেন না। সেই জন্য কোনও প্রভাবের কাছে মাথা না ঝুঁকিয়ে যোগ্য প্রার্থীকেই ডিলারশিপ দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ এসসি শংসাপত্র নিয়ে বড় পদক্ষেপের ভাবনা রাজ্যের, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাফল্যের খতিয়ান
অন্যদিকে, বলাইগছ জুনিয়ার হাইস্কুলের প্রস্তাবিত র্যাশন ডিলারশিপ দেওয়া নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ তুলে সেখানকার ৩০৪ জন গ্রামবাসী দার্জিলিং জেলা খাদ্য দপ্তরে গণস্বাক্ষর করা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, যাঁকে এখানে র্যাশন ডিলারশিপ দেওয়া হচ্ছে, তাঁর বাবা শাসকদলের প্রভাবশালী নেতা এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। প্রভাব খাটিয়ে ওই ব্যক্তির ছেলেকে র্যাশন ডিলারশিপ দিলে র্যাশনের খাদ্যপণ্য মানুষ পাবেন না বরং চুরি হয়ে যাবে। অভিযোগ, গত বছর ফাঁসিদেওয়ায় র্যাশন ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে শাসকদলের নেতা পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকাঠামো ঠিক না থাকায় ওই ব্যক্তি ডিলারশিপ পাননি। এবার আবার প্রচুর টাকার বিনিময়ে এই ডিলারশিপ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।