কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
বিশ্বকর্মা পুজো এ বছর এক অনন্য আঙ্গিকে পালন করলেন বনকর্মী, বনবস্তির বাসিন্দা এবং পর্যটকেরা। দেবতার বাহন হাতিকেই কেন্দ্র করে সাজানো হয় এবারের পূজা। বিশেষ তাৎপর্য হল পুজোর সকালেই ডুয়ার্স জুড়ে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই উৎসবের সূচনা হয়। ভিজে আবহাওয়ার মাঝেই বনকর্মীরা পূজোতে মেতে ওঠেন, আর পর্যটকরাও তাতে অংশ নেন।
ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যান, ধুপঝোরা ও বুধুরাম বিটে থাকা পোষা কুনকি হাতিদের ভগবানের রূপে পূজা করা হয়। গরুমারা জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত বিটে থাকা মোট ২৮টি কুনকি হাতি এবং জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কুনকি হাতিদেরও পুজো করা হয়।
বুধবার মেটেলি ব্লকের ধূপঝোরায় এই বিশেষ পূজা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন পর্যটকরা। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ। পূজো শেষ না হওয়া পর্যন্ত উপোস ছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তাঁদের প্রার্থনা—ফসল যেন হাতির হাত থেকে রক্ষা পায়।
আরও পড়ুনঃ ঋগবেদ অনুযায়ী, তিনি সৃষ্টির দেবতা; দ্বারকা থেকে রাবণের লঙ্কা, আর কী কী নির্মাণ করেছিলেন বিশ্বকর্মা?
হাতিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বসন্ত, হিলারি, জেনি, মাধুরী, কাবেরী, কৃষ্ণকোলি, শ্রাবনী,ভীম, বিরও শীলাবতী । গরুমারা জাতীয় উদ্যানের গরুমারা বুধুরাম বিট হাতি পিলখানায় পুজো দেওয়া হয় অরণ্য, রাজা, আমনা, ডায়না, রামি হাতি রয়েছে ধূপঝোরা হাতি পিলখানায় এই জ্যান্ত হাতিদের বিশ্বকর্মা রূপে পূজা করা হয়।
সকালে প্রথমেই নদীতে স্নান করিয়ে ঝকঝকে করে সাজানো হয় তাদের। প্রতিটি হাতির শরীরে তাদের নাম লিখে দেওয়া হয়। এরপর রঙিন খড়িমাটি দিয়ে সাজিয়ে, আচার মেনে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজোর শেষে হাতিদের খাওয়ানো হয় বিশেষ ভোজ। সেদিনের মেনুতে ছিল চা, ডাল, গুড়, ছোলা দিয়ে কলাপাতায় মুড়ে দেওয়া বিশেষ খাবার।
এই ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী থাকতে পেরে খুশি পর্যটক তাঁদের কথায় “জীবন্ত হাতির পূজা এর আগে কখনও দেখিনি। এই অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য। অংশ নিতে পেরে আমরা ভীষণ আনন্দিত।”
ধূপঝোড়া বিট আধিকারিক বলেন, “জলপাইগুড়ি ডিভিশনের অধীনে থাকা তিনটি হাতি পিলখানায় আজ হাতি পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। মোট ২৮টি কুনকি হাতিকে নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে পূজা দেওয়া হয়েছে। বনকর্মীদের পরিবার, গ্রামবাসী ও পর্যটক সকলে মিলেই পূজায় অংশ নেন। মাহুত ও পাতাওয়ালারা সারা বছর হাতির সঙ্গে থাকেন, তাই এদের ভগবানের রূপে পূজা করা হয়।”
আরও পড়ুনঃ ‘রাজ্যে ছুটিই চলছে, কাজ-পড়াশোনা কোথায় হচ্ছে?’ ক্ষোভ দিলীপের
এক পর্যটক বলেন, “এমন আয়োজন জীবনে প্রথম দেখলাম। বনদফতরের উদ্যোগে হাতি পূজো হয়েছে শুনে আজ এসেছিলাম। সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল হাতিগুলোকে। পূজোর পাশাপাশি সুস্বাদু খাবারও খাওয়ানো হয় তাঁদের। এই পুজোয় অংশ নিতে পেরে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।”
ধূপঝোরা বিটের আধিকারিক জীবন বিশ্বকর্মা বলেন, “সকাল থেকেই ব্যস্ততা ছিল সবার মধ্যে। প্রথমে হাতিদের ঝামা ঘোষে নিয়ে গিয়ে নদীতে স্নান করানো হয়। এরপর বিভিন্ন রঙের খড়িমাটি দিয়ে সাজানো হয়। তার পর শুরু হয় পূজা। পূজোর পর বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয় চাল, গুড়, ছোলা দিয়ে। পাশাপাশি পর্যটক ও স্থানীয় মানুষদেরও খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়ানো হয়।”
ডুয়ার্সের প্রকৃতিকে সঙ্গী করেই বৃষ্টি ভেজা দিনে হাতিদের কেন্দ্র করে যে পূজা অনুষ্ঠিত হল, তা যেন হয়ে উঠল মানুষ, প্রকৃতি ও জীবজন্তুর এক মহাসম্মিলন। বিশ্বকর্মা পুজোয় এভাবেই অন্যরকম মাত্রা পেল জলপাইগুড়ি।