দিঘার সমুদ্রসৈকতের প্রতি বাঙালির টান চিরকালীন। সারা বছর সেখানে পর্যটকরা যান। গত ৩০ এপ্রিল দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পর সেখানে ভিড় বেড়েছে। তবে তৃণমূলের শহিদ দিবসের আগে আরও কিছুটা ভিড় বাড়ছে দিঘায়। কিন্তু, হঠাৎ করে তৃণমূলের শহিদ দিবসের আগে দিঘায় ভিড় বাড়ছে কেন? তৃণমূলের শহিদ দিবসের সঙ্গে দিঘায় ভিড় বাড়ার কী সম্পর্ক? সম্পর্ক রয়েছে। আর সম্পর্ক যে রয়েছে, সেকথা বলছেন বিভিন্ন জেলা থেকে শহিদ দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিতে কলকাতায় আসা তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।
আরও পড়ুনঃ ২১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মধ্য কলকাতায় যেন যানজট না-হয়! পুলিশকে বলল হাইকোর্ট
প্রতি বছর একুশে জুলাই ধর্মতলায় ভিড় করেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। আসেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আবার উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে ২-৩ দিন আগেই কলকাতায় পৌঁছে যান তাঁরা। গত বছর পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, একুশে জুলাইয়ের সমাবেশের জন্য ২-৩ দিন আগে যেসব তৃণমূল কর্মী-সমর্থক পৌঁছে যেতেন, তাঁরা কলকাতার নানা স্থান ঘুরে দেখতেন। চিড়িয়াখানায় ভিড় করতেন। যেতেন দক্ষিণেশ্বর-কালীঘাট।
এবারও একাধিক জেলার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ইতিমধ্যে কলকাতায় আসতে শুরু করেছেন। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে তাঁদের থাকার জন্য এবছর পাঁচটি হ্য়াঙ্গার করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছেন সল্টলেকে। আর তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল একুশে জুলাইয়ের আগে কেন ভিড় বাড়ছে দিঘা।
আলিপুরদুয়ার থেকে ইতিমধ্যে ২০০ জনের বেশি কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন। দল যেভাবে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, তাতে তাঁরা খুশি। কেউ কেউ সপরিবারে এসেছেন শহিদ দিবসের সমাবেশে যাবেন বলে। কিন্তু, কেন তাঁরা তিন-চারদিন আগেই পৌঁছে গেলেন? বিপ্লব সাহা, শান্তি বিশ্বাস, মানিক সেনদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর কারণ জানা গেল।
অন্যান্য বছর শহিদ দিবসের সমাবেশে যোগ দিতে আগে পৌঁছে যাওয়ার পর কলকাতার নানা স্থানে ঘুরতেন তাঁরা। এবারও সেইসব পরিকল্পনা রয়েছে। চিড়িয়াখানা, দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটের মন্দিরে যাবেন। কিন্তু, তার সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে আর একটি নাম। দিঘার জগন্নাথ ধাম।
মানিক সেন নামে আলিপুরদুয়ারের এক তৃণমূল কর্মী বলেন, “দিঘার জগন্নাথ ধাম এবার বাড়তি আকর্ষণ। এটা আমাদের গর্বের। আমরা সবাই মিলে জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে যাব। আমরা প্রায় ২০০ জন এসেছি। প্রায় সবাই যাব।” সপরিবারে আসা বিপ্লব সাহা বলছেন, কলকাতার বিভিন্ন জায়গা তো ঘুরবেনই। তার সঙ্গে একদিন দিঘা যাবেন। আলিপুরদুয়ার থেকে আসা অনেককেই বললেন, সারা বছর কাজের মাঝে ঘোরার তেমন সময় পান না। একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে দিঘা ঘুরে আসবেন।
আরও পড়ুনঃ ‘জনগণ কত সহ্য করবে? সিপি কি মুচলেকা দেবেন?’ ২১ জুলাইয়ের সভা নিয়ে বিরক্ত হাইকোর্ট
‘রথ দেখা আর কলা বেচা’ একসঙ্গে করতে চান দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে আসা শতাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থকও। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে পৌঁছে গিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের ১৩০ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। অন্য বার এসে অনেকেই চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া কিংবা কালীঘাট মন্দির ঘুরে নেন। কিন্তু এ বার দক্ষিণ দিনাজপুরের এই বাসিন্দাদের বেশিরভাগ, বিশেষত মহিলারা যাবেন দিঘার জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে। তাঁরা বলছেন, পুরী যেতে সময় লাগে। অথচ কলকাতা থেকে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির এক দিনে দেখে তাঁরা ফিরে আসবেন। এবং একুশে জুলাই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শুনে বাড়ি ফিরবেন। মহিলাদের কথায়, সারা বছর ধরে বাড়ির কাজ করেন। কোথাও যাওয়ার সময় পান না। কিন্তু একুশে জুলাই শহিদ দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তাঁদের আবেগ নিয়ে কলকাতায় আসেন। আর এ বারে সেই মুখ্যমন্ত্রী দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি করে দিয়েছেন। তাই বেশিরভাগ মহিলা যাঁরা বৃহস্পতিবার চলে এসেছেন, তাঁরা শুক্রবার দিঘার জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে রওনা দেন।