বাংলা ভাষার উপর ‘আক্রমণ’ নিয়ে অগস্ট মাসে বসতে পারে রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। পরিষদীয় দফতর সূত্রে এমনই জানা যাচ্ছে। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর লাগাতার আক্রমণ তথা নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং বাংলা ভাষায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ বলে অভিযুক্ত করার বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনে আলোচনা করা হবে। এই বিষয়ে বিধানসভার তৃণমূল পরিষদীয় দলের সঙ্গে পরিষদীয় দফতরের একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই দাবি তৃণমূল পরিষদীয় দলের এক সদস্যের।
সোমবার, ২১ জুলাই তৃণমূলের মহাসমাবেশ ছিল। সেই সমাবেশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দেন, বাংলা ভাষার উপর ‘আক্রমণ’ নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে ‘প্রতি-আক্রমণে’ যাবেন। সেই মর্মে সংসদেও তাদের ভূমিকা পালন করবে তৃণমূল।
আরও পড়ুনঃ ‘হঠাৎ উধাও’ ৩০০-র বেশি প্রাণী আলিপুর চিড়িয়াখানায়! হাইকোর্টে মামলা
পরিষদীয় দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্তরের পাশাপাশি যাতে রাজ্যেও ‘প্রতি-আক্রমণাত্মক’ ভূমিকা নেওযা যায়, তা নিশ্চিত করতেই রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথা ভাবা হচ্ছে। তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, ৮ থেকে ২১ অগস্টের মধ্যে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন বসতে পারে। সেই অধিবেশনে যেমন বাংলাভাষা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে আলোচনা হবে, তেমনই পেশ করা হবে চারটি বিলও। বিলগুলির বিষয়ে পরিষদীয় দফতর আপাতত আলোচনা করছে আইন দফতরের সঙ্গে। বিল সংক্রান্ত বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিশেষ অধিবেশন বসানোর আবেদন করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও নানা বিষয়ে বিশেষ অধিবেশন বসিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। গত বছর আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসকককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে ‘অপরাজিতা বিল’ পাশ করাতে বিশেষ অধিবেশন বসেছিল অগস্ট মাসেই। এ বার বিশেষ অধিবেশনের কথা ভাবা হচ্ছে বাংলা ভাষা ও বাঙালির ওপর বিজেপির ‘আক্রমণের’ প্রেক্ষিতে।
সোমবার থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। ওই অধিবেশন চলাকালীন এই একই বিষয়ে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্না দেবেন তৃণমূল সাংসদেরা। পাশাপাশি, লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বাংলায় বক্তৃতা করে বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে সরব হবেন তাঁরা। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে মমতা এবং অভিষেক ওই রণনীতির কথা জানিয়েও দিয়েছেন। তবে বিধানসভায় কোন কৌশলে তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
আরও পড়ুনঃ দুধে ঘাটতির আশঙ্কা! বুধবার থেকেই দুধের সঙ্কট?
২৭ জুলাই, রবিবার ‘নানুর দিবস’ পালন দিয়ে শুরু করে প্রতি সপ্তাহের শনি ও রবিবার বাংলা ভাষার পক্ষে এবং বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তবে বঙ্গ বিজেপিও ওই বিষয়ে রাজ্যের শাসকদলকে ছেড়ে কথা বলতে চাইছে না। মঙ্গলবার কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বাংলা ভাষার উনি (মুখ্যমন্ত্রী) কে? বাংলা ভাষা রক্ষা করার হকদারি ওঁকে কে দিয়েছে? যে দিন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি করার কথা বলা হয়েছিল, সে দিন প্রথম বিরোধিতা উনি করেছিলেন। উনি যে পার্টিকে গালাগালি করেন, সেই পার্টিও প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন বাঙালি। তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।’’ শুভেন্দুর আরও বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ছিলেন প্রয়াত বিবেক দেবরায়। তিনিও বিশিষ্ট বাঙালি। বর্তমান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যালও বাঙালি। কয়েক দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকার একজন কৃতী অধ্যাপক অসীম ঘোষকে হরিয়ানার রাজ্যপাল করেছেন। তিনিও একজন বঙ্গসন্তান। তাই এ সব বিষয়ে ওঁর কথা না বলাই ভাল।’’