“এই আইসি দুর্নীতিগ্রস্ত। বোলপুর থানার আইসি প্রত্যেক বালি মাফিয়া, পাথর মাফিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে কাজ করে। এই লিটন হালদার অনুব্রত মণ্ডল নামক ব্র্য়ান্ডকে দমানোর চেষ্টা করছে।” ‘ব্র্যান্ড’ অনুব্রত মণ্ডলের দেখানো পথেই পুলিশকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বীরভূম জেলার সভাপতি বিক্রমজিৎ সাউ।
বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোনে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দেওয়া এবং অশ্লীল কথাবার্তা বলার অভিযোগ উঠেছে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। সেই অডিও ভাইরাল হতেই রাজ্য-রাজনীতিতে হইচই শুরু হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে তাঁকে এই ঘটনায় ৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল। অনুব্রত অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষমাও চেয়ে নেন। তবে পুলিশও তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘দাদার‘ দেখানো পথেই হাঁটলেন ‘অনুগত’ তৃণমূল ছাত্রনেতা বিক্রমজিৎ।
আরও পড়ুন: সটান ‘ডিগবাজি’ অনুব্রতর! গালাগালি কেষ্ট করেননি, AI করেছে
বোলপুরের সেই পুলিশ অফিসার লিটন হালদারকে তীব্র আক্রমণ করলেন বিক্রমজিত। সেই ভিডিও বার্তা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্য়াল মিডিয়ায়। যেখানে তিনি বলছেন, “লিটন হালদারের দম থাকলে, বুকের পাটা থাকলে সত্যি কথাটা জানাও। বালিঘাট থেকে বোলপুরের সাধারণ মানুষকে নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলেছ, তুমি অনুব্রত নামক শক্তিকে নিজের অপকর্মের মাধ্যমে দমানোর চেষ্টা করেছ। তোমার অপকর্মে অনুব্রতর শক্তি দমে না। এডিটিং করে ভয়েস তুলে আনার, এডিটিং করে সেই ভয়েস মার্কেটে দেওয়ার চেষ্টা করেছ।”
ওই ছাত্রনেতা আরও বলেন, “দম থাকলে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং বীরভূম জেলা তথা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে একটা এফআইআর করে দেখিও লিটন হালদার। তুমি দুর্নীতিপরায়ণ, কত লোকের থেকে কী ভাবে টাকা নিয়েছ, নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি কী করে অনুব্রতর নামে তুলে দিতে চেয়েছিলে, সমস্ত তথ্য়প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। ওই রেকর্ডিং যে অনুব্রতর, তা প্রমাণ করতে পারবে? দম আছে? ছিলে তো সিআইডি-তে, গ্যারেজ পোস্টে। দয়া করে দল, সরকার এই জায়গায় এনেছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলা উচিত ছিল তোমার। তুমি মূর্খ। ভাবছিলেন ডালে ডালে চলবে, তোমাদের শিরা-উপশিরায় আমরা চলি।”
আরও পড়ুন: পুরনো আতঙ্কই ফিরছে! ৩ হাজারের গণ্ডিও পার করে গেল
এখানেই থামেননি তৃণমূল ছাত্রনেতা বিক্রমজিৎ। ভিডিও করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি। বলেন, “লিটন হালদার, তোমাকে চ্যালেঞ্জ করলাম। তুমি আইসি, সরকারি কর্মী। আমি কোনও অন্য়ায় করে থাকলে শাস্তি দিও।” যদিও পরবর্তীতে এই ছাত্রনেতা ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, “কারও ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকলে আমি দুঃখিত।”
এদিকে অনুব্রতর কুকথার পর পুলিশকে ছাত্রনেতার কদর্য ভাষায় আক্রমণ, এমন ঘটনা রাজ্যে বাড়তে থাকবে বলেই মনে করছেন অনেকে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলাবলি করছেন, অনুব্রতর বিরুদ্ধে যদি না পুলিশ কোনও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, সমাজবিরোধীদের সফট টার্গেট হয়ে দাঁড়াবে পুলিশ প্রশাসন। টার্গেট করার সাহস পেয়ে যাবে ছোট, বড় নেতারা।
কী বলেছেন বিক্রমজিৎ?
একটি ভিডিয়োয় বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘লিটন হালদার নাম ধরে বলছি, বাপের বেটা তোমার যদি দম থাকে তাহলে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে, TMCP-র বিরুদ্ধে এবং বীরভূমের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে FIR করে দেখিও। তুমি জান নিজে যে কতটা দুর্নীতি পরায়ন। কত লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছ? তুমি তোমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি কীভাবে অনুব্রত মণ্ডলের হাতে তুলে দিতে চেয়েছ সমস্ত তথ্য প্রমাণ আছে। তোমরা ডালে-ডালে চললে আমরা শিরা-উপ-শিরায় চলি। লিটন হালদার তুমি সরকারি কর্মচারি। আমি অন্যায় করে থাকলে শাস্তি দিও। কিন্তু তুমি যদি অন্যায় করো, তাহলে এর শাস্তি বীরভূমেই পেতে হবে…।”