কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
চাকরি নেই তো কী! চা তো আছে। থুড়ি, চায়ের ব্যবসা আছে। ব্যবসার কোনও কারখানা নেই, দোকান নেই। আছে শুধু একজোড়া সাইকেল। বালুরঘাটের দুই তরুণ সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিয়ে ঘুরে বেড়ান শহরজুড়ে। সাইকেলে লাগানো বাস্কেটে থাকে চা। সব সময় ‘চা চাই’ হাঁকতেও হয় না। উলটে মোবাইলে বরাত আসে। অমুক জায়গায় চা নিয়ে এসো। অমনি সাইকেল চালিয়ে সেখানে উপস্থিত হন তাঁরা। একসঙ্গে নয়। দুজনের আলাদা ব্যবসা। আলাদাই ছোটেন। একজন বালুরঘাটের চকভৃগুর কৌশিক দাস, অন্যজন নামাবঙ্গির সমীর সাহা।
কোভিদ সময় সংসারের অসচ্ছলতায় আয়ের পথ খুঁজতে সেই যে চা ফেরি শুরু করেছিলেন কৌশিক ও সমীর, সাইকেলের গতি আর বন্ধ হয়নি। কিছু স্পেশালিটিও আছে তাঁদের তৈরি চায়ের। কৌশিক বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর উপাদান দিয়ে বানানো আমাদের চা শুধু স্বাদে নয়, ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। গলার সমস্যায় গোলমরিচ, আদা, লবঙ্গ তো একধরনের ওষুধই।’
আরও পড়ুন: চল্লিশেই জয়! রায়গঞ্জের মাটিতে লেখা হল নতুন ইতিহাস
বালুরঘাট কলেজ, থানা মোড় কিংবা হাইস্কুল মাঠ প্রতিদিন কয়েক ডজন কাস্টমারের কাছ থেকে ডাক আসে কৌশিকের কাছে। সমীর জানালেন, সকাল সাতটায় চা তৈরি করে বাড়ি থেকে বের হন। সারাদিনে প্রায় ১২ লিটার চা বিক্রি হয়। বাড়ি ফিরতে রাত দশটা। আদালত চত্বর, তহবাজার ইত্যাদি বিভিন্ন আড্ডার জায়গায় তাঁর দেখা মেলে।
বাঙালির আড্ডার সঙ্গে চায়ের কাপ হাতে না থাকলে জুতসই হয় না। ঠিক সুবাদে দুয়ারে চা নিয়ে পৌঁছে যান কৌশিক ও সমীর। আড্ডা ছেড়ে কাউকে আর চায়ের দোকানে যেতে হয় না। এক ফোনে চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে হাজির হন দুই ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা। বন্ধুদের আড্ডা, নাটকের মহড়া, রাজনৈতিক দলের সভা- সব জায়গায় তাঁদের অবারিত যাতায়াত।
আরও পড়ুন: হায়রে এটাও কি সম্ভব! ED-কে ধরতে ময়দানে ED
ধোয়া ওঠা লাল চা, তার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার লেবু, গোলমরিচ, আদা, লবঙ্গের নির্যাস। মাত্র ৫ টাকায় এমন নিখাদ ভালোবাসা বড় একটা মেলে না যে। ক্রেতার রুচি এবং পছন্দমাফিক কখনও ফরমায়েসি চা-ও বানিয়ে দেন। কেউ হয়তো গোলমরিচ, আদার সঙ্গে সামান্য বিট নুন দিয়ে লাল চা খেতে ভালোবাসেন, লেবুর সঙ্গে আদার ঝালঝাল রসায়নটা হয়তো কারও বেশি পছন্দ। হাসিমুখে সব আবদার সামলান এই দুজন। বালুরঘাটের নাট্যকর্মী কাঞ্চন সাহার মতে, ‘এটা শুধু চা বিক্রি নয়, এ এক চলমান স্টার্টআপ। ক্লান্ত বিকেলে এক কাপ সুগন্ধী লাল চা ঘুচিয়ে দিচ্ছে সব ক্লান্তি।’ চায়ের চাহিদা পূরণ করে লাভের মুখ দেখছেন বলেই না কৌশিক ও সমীর অন্যদেরও পথ দেখাচ্ছেন। গরম এককাপ লাল চা-এ জন্ম দিচ্ছে নতুন আশা।