“নীরব পৃথিবী চায়” (Part: 8)
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
দেখতে দেখতে তিনটে দিন কেটে যায়। চঞ্চলাদেবী আরো অসুস্থ হয়ে যান। প্রবল জ্বরে আবোল- তাবোল বকতে শুরু করেন। মাথায় জল, কপালে জলপটি আর পাখার বাতাস ভয়ঙ্কর জ্বরকে থামাতে পারছে না। ডাঃ ঘোষ বলে গেছেন, “তার ওষুধে কাজ না হলে বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।” এমনি করে কেটে যায় আরও চারটা দিন।
অষ্টমদিনে আবার দরজায় কড়া নাড়ে যমরাজ স্বয়ং। এবার তিনি একা নন, সাথে উকিলবাবু আর জন চারেক লেঠেল। দরজার পাল্লা খুলে দিতেই যমরাজের মূর্তি দেখে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল নরেন।
“চক্রবর্তীমশায়, আপনি ?”
আরও পড়ুন: Bollywood Actor: হাসপাতালে ভর্তি, নিজের বাড়িতেই ছুরি দিয়ে কোপানো হল সইফ আলি খানকে
“হ্যাঁ, না এসে থাকতে পারি। তোমার কথায় সেদিন নই ছেড়েই দিয়েছিলাম, আজ কিন্তু ছাড়ছি না। কি বলেন উকিলবাবু ?”
পাশে দন্ডায়মান উকিলবাবু তাল মিলিয়ে মাথা নেড়ে বলেন, “ঠিকই তো। সেদিন নই ছেড়েই দিয়েছিলেন আজ কিন্তু ছাড়বেন কেন ? ছাড়বেন না।” কথাটা বলে হাসতে থাকেন। তাদের দেখাদেখি একে একে সকলে হাসতে থাকে।
“কিন্তু উকিলবাবু, আমার মা খুবই অসুস্থ, কখন কি হয়ে যাবে বলা যাচ্ছে না, তাই আমাকে একটু দয়া করুন। ”
“তোমার মা অসুস্থ না সুস্থ আমি কি জানবো ? টাকা যখন দিতে হবে তখন তো আগু- পিছুর কি আছে ? দিয়ে দাও তো বাবা, ভালোই ভালোই দিয়ে দাও। নইলে ……… ” কথাটা শেষ না করেই উকিলবাবু পিছন দিকে তাকালেন।
শয়তানের শয়তানি চাল বুঝতে নরেনের আর কিছুই বাকী থাকে না। কিন্তু কিছুই করার নেই। এবার হাতজোড় করে মিনতি করে, “দেখুন উকিলবাবু, আমি আপনার কাছে হাত জোড় করছি, এমন নিষ্ঠুর কাজ করবেন না। মা খুবই অসুস্থ, একটু সুস্থ হয়ে গেলে আমরা এই ঘর ছেড়ে চলে যাবো। আমি কথা দিচ্ছি। ” চোখের জল ধরে রাখার ক্ষমতা আজ নরেনের নেই, দু’গাল বেয়ে জল জামাকে ভিজাতে থাকে।
আরও পড়ুন: Death in Kolkata: গল্ফগ্রিনে গলাকাটা দেহ উদ্ধার
নরেনের কান্না শুনে উকিলবাবুর হৃদয়টা একটু যেন গলে যায়। তার এই দুর্বস্থা দেখে নিজে নিজেই লজ্জিত হন উকিলবাবু। আর্থিক সাহায্য দিতে না পারলেও একটা আশ্বাস বাণী তো দিতে পারবেন, তাই নরেনকে একটা উপায় দেখানোর জন্য নিজের মুখের ঠোঁটগুলো নড়াতে যাবেন এমনাবস্থায় চক্রবর্তীমশায় ক্রোধে ফুলে উঠেন, “না না, সে হবে না। এমনি করে তো আমার সমস্ত টাকা মার খাবে আর আমি হাঁ করে থাকবো। সে হবে না। ভালো ভালোই দিবে তো বলো নইলে আমি লেঠেল দিয়ে সমস্ত কিছু বার করে ঘরে তালা লাগিয়ে দেবো।” কথাটা বলে তার অতি প্রিয় বস্তুটি মাটিতে ঠকঠক করে আছড়াতে থাকেন।
নরেন কি করবে বুঝতে পারে না। চক্রবর্তীমশায়ের পা ধরে কাঁদতে থাকে, “এবারের মতো ছেড়ে দিন। নইলে আমরা যে মাঠে মারা যাবো। ভাত না খেয়ে দুদিন উপোস দিয়ে কাটাতে পারব কিন্তু ঘর চলে গেলে কোথায় দাঁড়াবো বলুন। ”
“না, আমি আর কিছুই করতে পারবো না, ছাড় হতভাগা ছাড়, আমার পা দুটো ছাড়।” পা দুটো ছাড়িয়ে নরেনের বুকে জুতোর এক লাথি মেরে চক্রবর্তীমশায় ঘরের ভিতর ঢুকে যান।