বিরল বললেও কম বলা হয়। কারণ, বিরল মানে অল্প হলেও রয়েছে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর চিকিৎসকেরা বলছেন তাঁরা যে রক্তের গ্রুপের সন্ধান সম্প্রতি পেয়েছেন, সেটি আগে আর কারও শরীরে পাওয়া যায়নি। অন্তত এমন ঘটেছে বলে তাঁরা জানেন না।
নতুন ওই ব্লাড গ্রুপের নাম দেওয়া হয়েছে সিআরআইবি। নামের শেষ দু’টি অক্ষর এসেছে ইন্ডিয়ার ‘আই’ এবং বেঙ্গালুরুর ‘বি’ থেকে। যেহেতু ভারতে প্রথম পাওয়া গেল ওই বিরল গ্রুপের রক্ত, তাই নামেও জুড়েছে ভারত এবং বেঙ্গালুরুর নাম।
আরও পড়ুনঃ দরাজদিল মমতা! বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর সরকারি ছুটি
‘অভূতপূর্ব’ ওই রক্তের গ্রুপ পাওয়া গিয়েছে ৩৮ বছরের এক মহিলার শরীরে। কর্নাটকের কোলকার জেলার বাসিন্দা ওই মহিলা হার্টের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন কোলারের আর এল জালাপ্পা হাসপাতালে। কিন্তু তাঁকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হলে দেখা যায়, কোনও রক্তের সঙ্গেই তাঁর রক্তের গ্রুপ মিলছে না। এমনকি, তাঁর নিজের পরিবারের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনের রক্তও দেওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। বাধ্য হয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রোগিণীকে পাঠানো হয় বেঙ্গালুরুর রোটারি বেঙ্গালুরুর টিটিকে ব্লাড সেন্টারের অ্যাডভান্সড ইমিউনোহেমাটোলজি রেফারেন্স ল্যাবে। সেখানে রক্তের বিশ্লেষণ করে বিস্মিত হন গবেষকেরা। কারণ ওই মহিলার রক্তে এমন এক ধরনের অ্যান্টিজেন ছিল, যার সন্ধান আগে পাওয়া যায়নি।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই রক্তের নমুনা এর পরে ব্রিটেনের ব্রিস্টলের একটি গবেষণাগারে পাঠান বেঙ্গালুরুর চিকিৎসকেরা। টানা ১০ মাস ধরে মলিকিউলার টেকনিক ব্যবহার করে চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। শেষে ব্রিস্টলও তাদের রিপোর্টে জানায়, ওই মহিলার রক্তের গ্রুপে একেবারে নতুন একটি অ্যান্টিজেন রয়েছে। যাকে ক্রোমার ব্লাড গ্রুপ সিস্টেমের তালিকায় ফেলা যেতে পারে (সিআরআইবি-র ‘সি’ এবং ‘আর’ ওই ক্রোমার শব্দেরই প্রতীক)।
আরও পড়ুনঃ দরকার এ পজেটিভ, রোগীর শরীরে গেল বি পজেটিভ; গুরুতর অভিযোগ
পরে জুন মাসে মিলানে আয়োজিত একটি ব্লাড ট্রান্সফিউশন কনফারেন্সে ‘সিআরআইবি’ রক্তের গ্রুপ নিয়ে আলোচনাও হয়। মেলে ওই মহিলার পরবর্তী চিকিৎসার একটি সমাধান সূত্রও। চিকিৎসকেরা জানান, যেহেতু বিশ্বের কোনও মানুষের রক্তের সঙ্গেই ওই মহিলার রক্তের গ্রুপ মিলবে না, তাই রক্তের প্রয়োজন পরলে তা মেটানোর আগাম ব্যবস্থা করতে হবে নিজেকেই। ভবিষ্যতের কথা ভেবে সংরক্ষণ করতে হবে নিজের রক্ত।
ওই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অটোলোগাস ট্রান্সফিউশন। মিলানের কনফারেন্সে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এর জন্য ওই মহিলাকে নিজের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িতে নিতে হবে। তার পরে নিয়ম করে নিজের জন্যই ‘রক্তদান’ করতে হবে নিজেকে। যাতে ভবিষ্যতের জন্য তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। এবং প্রয়োজন পড়লে কাজে লাগানো যেতে পারে।